তুর্থ শ্রেনীর ছাত্র হিমেল, বয়স ১১ বছর। গাংনী উপজেলার কসবা গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর লাবলু হোসেনের ছেলে। স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র।
জমিজমাহীন লাবলু হোসেন অন্যের দেয়া এক টুকরা জমির ওপর ছোট একটি ঘর বেঁধে ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করতেন। হিমেল অনেক মেধাবী। লেখাপড়ায় অনেক ভাল। গত ৩০ মে রাতে ছোট বোন লাবনিকে নিয়ে পড়তে বসেছিল। এরই মধ্যে বাড়ির পাশের কয়েকজন চিৎকার দেয় আগুন! আগুন!।
প্রতিবেশিরা ছুটে আসে আগুন নিভানোর কাজে। মা কোহিনুর খাতুন ও বাবা লাবলু হোসেন নিষ্ঠুর ও নির্দয় আগুনে জ¦লে ওঠা একমাত্র ঘরটিকে টিকিয়ে রাখতে আগুন নেভানোর কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
এসমসয় ঘরের মধ্যেই আটকা পড়ে শিশু হিমেল ও ছোটবোন রুমিয়া। দাউ দাউ করে জ¦লে ওঠা ঘরের ভিতর থেকে ছোট বোনকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে গিয়ে ঘরের আড়ার একটি জ¦লন্ত বাঁশ হিমেলের মাথায় পড়ে।
আগুন ভেঙ্গে পড়ে হিমেলের একটি চোখে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ঘটনা স্থলে পৌঁছানোর আগেই ঘরের আসবাপত্র যা ছিল সব পুড়ে ছাই।
তাৎক্ষনিক আহত হিমেলকে গাংনী হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাকে চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরামর্শ দেয়। হিমেলকে নিয়ে ভর্তি করা হয় ঢাকা ইস্পাহানি আই ইন্সটিটিউট হাসপাতালে।
হিমেলের একটি চোখ তিনবার অপারেশন করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। তার একটি চোখ একেবারেই অন্ধ হয়ে গেছে। সে আর কোনদিন একটি চোখে দেখতে পারবেনা বলে জানান চিকিৎসক। অপর চোখটিও ধিরেধিরে নস্ট হতে চলেছে। তার আরো একটি অপারেশন না করা হলে অপর চোখটিও নস্ট হয়ে যাবে অচিরেই।
ধারদেনা করে একটি চোখ তিনবার অপারেশন করা হলেও চোখের কোনো উন্নতি হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু লাবলুর পরিবারের সে অর্থ নেই। এদিকে চিকিৎক পরামর্শ দিয়েছেন নস্ট চোখটি খুব শিঘ্রই অপসারণের পাশাপাশি অপর চোখটির উন্নত চিকিৎসা না করালে সেটিও নস্ট হয়ে যাবে।
ধিরেধিরে অন্ধ হয়ে যাবে মেধাবী শিশু হিমেল। আর কোনদিন দেখকে পাবেনা পৃথিবীর আলো।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান, বিষয়টি সাংবাদিক আকতারুজ্জামানের মাধ্যমে শুনে গতকাল রবিবার সকালে হিমেলের বাড়িতে যান। এবং হিমেলের চিকিৎসার জন্য তার মা কোহিনুরের হাতে ব্যাক্তিগত ভাবে ৫ হাজার টাকা প্রদান করেন।
হিমেলের চোখে আলো ফিরিয়ে দিতে আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও সব ধরনের ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন। সেই সাথে পুড়ে যাওয়া ঘরটি তৈরীতে সার্বিক সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান।
গাংনী প্রতিনিধি