এখন থেকে ওএমএস, খাদ্যবান্ধব ও ইপিওপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় খাদ্য অধিদফতরের চালের বস্তার গায়ে বিশেষ কোড নম্বর দেয়া হবে। অমোচনীয় লাল কালির এই কোড নম্বরই বলে দেবে ওই চাল কোন জেলা, উপজেলা, এলএসডি বা কোন মিলের।
ফলে কোথাও চুরির চাল ধরা পড়লে কোড নম্বর দেখেই বোঝা যাবে কারা এর সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে বস্তার গায়ে ‘শুধু খাদ্য অধিদফতরের জন্য তৈরি’ লেখা থাকে।
ফলে চুরির চাল কোন জেলা, উপজেলার বা কোন গুদামের তা কেউ স্বীকার করেন না। ধরা পড়ে না আসল আপরাধী। এখন থেকে তার সঙ্গে কোড নম্বরও লেখা থাকবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয় খেয়াল করছেন প্রচুর পরিমাণে সরকারি চালচোর ধরা পড়ছেন। এসব অপরাধের সঙ্গে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত।
চুরির চালের বস্তা ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্টরা নানা অজুহাতে বলেন এটা তার গুদামের চাল নয়, অথবা পাশের উপজেলা বা জেলার। নানা ধরনের ফাঁকফোকর দিয়ে আসল অপরাধীরা বেরিয়ে যায়। এখন থেকে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, সিএসডি, এলএসডির সুনির্দিষ্ট কোড নম্বর অমোচনীয় লাল কালিতে চালের বস্তার গায়ে লেখা থাকবে।
ফলে নম্বর দেখেই শনাক্ত করা যাবে এই চাল কোন গুদামের। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আর এসব অস্বীকার করে পার পাবে না। আইনানুযায়ী তার শাস্তি হবে।’ এ সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনা শিগগিরই জারি করা হবে বলেও জানান নাজমানারা খানুম।
ইতোমধ্যে খাদ্য অধিদফতর থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনার চিঠি আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের (আরসি-ফুড) মাধ্যমে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের (ডিসি-ফুড) কাছে পাঠানো হয়েছে বলে একাধিক আরসি-ফুড এবং ডিসি-ফুডরা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গুদাম থেকে বিতরণ করা খাদ্যশস্যের বস্তায় ‘বিতরণকৃত’ স্টেনসিল ও সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী এলএসডি/সিএসডি, জেলা, পণ্য ও মৌসুমের নামসর্বস্ব স্টেনসিল প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না।
ফলে বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আটক করা ‘শুধু খাদ্য অধিদফতরের জন্য তৈরি’ বস্তা পাওয়া যাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে এ সব বস্তা কোন গুদামের তা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে খাদ্য অধিদফতর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়।
সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ওএমএস, খাদ্যবান্ধব ও ইপিওপি খাতে বিতরণকৃত বস্তায় জেলা, উপজেলা, এলএসডি ও মিলের নাম সংবলিত কোড নম্বর প্রদান করতে হবে অমোচনীয় লাল কালিতে। এ জন্য প্রচলিত বিধি-বিধান মোতাবেক আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সব গুদামের পাক্ষিক মজুদ যাচাইয়ের লক্ষ্যে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা প্রতিটি উপজেলার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক/ব্যবস্থাপক ও খাদ্য পরিদর্শক/কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক সমন্বয়ে কমিটি গঠন করবেন। কমিটি সরেজমিন এলএসডি/সিএসডি পরিদর্শন করে সংগ্রহ, ধান ছাঁটাই, ফলিত প্রাপ্তি, ইনভয়েস সূত্র প্রাপ্তি-প্রেরণ ও বিভিন্ন খাতে বিলি-বিতরণের তথ্য যাচাই করবে।
পরিদর্শনকালে খামাল কার্ড সূত্রে খামালের বাস্তব অবস্থান, খামালের উপরের স্তরের বস্তার সংখ্যা ও ওয়ারেন্টিসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র যাচাই করতে হবে।
অতঃপর প্রতিটি খামালের বস্তা গণনা করে কমিটির যৌথ স্বাক্ষরে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের প্রতিস্বাক্ষর এবং আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের প্রত্যয়নসহ প্রথম পাক্ষিকের মজুদ প্রতিবেদন প্রতি মাসের ১৮ তারিখে এবং দ্বিতীয় পাক্ষিকের প্রতিবেদন প্রতি মাসের ৩ তারিখের মধ্যে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে আবশ্যিকভাবে পাঠাতে হবে।
চিঠিতে বলা হয়, বিতরণ করা খাদ্যশস্যের বস্তা আটক নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে সে সম্পর্কে জেলা/আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মহাপরিচালককে অবহিত করে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। কমিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ঘটনা তদন্ত করবে। ঘটনার সত্যতা ও এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামতসহ দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে। সূত্র-যুগান্তর