জীবননগরে ভৈরব নদীর পাড়ের মাটি লুট বন্ধে মানববন্ধন করছেন কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার বেলা ৪টার দিকে উপজেলার বাঁকা জোড়া ব্রিজের মুখে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
এদিকে মানববন্ধন বন্ধ করার লক্ষে জীবননগর থানা পুলিশের সদস্যরা চেষ্ঠা করে অবশেষে সকাল বাধা উপেক্ষা করে তিন গ্রামের সাধারন মানুষ নদীর পাড়ে হাতে হাত রেখে মানববন্ধন সফল করেন।
মানববন্ধনে কৃষকেরা বলেন, নদী পুনঃখননের কারণে অনেক জমি অনাবিদ ছিল। পুনঃখননের পর নদীর পাড় না বেধে মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নদীপাড়ের কৃষি জমি, রাস্তা ও বাড়িঘর ভাঙানের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাঁরা নদীর পাড়ের মাটি লুট বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আলীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আবুল হাশেম বলেন, নদী পুনঃখনন করা হয়েছে। এতে কৃষকদের অনেক উপকার হয়েছে । তবে যদি নদীর পাড় না বেধে মাটি বিক্রি করা হয়, তাহলে কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নদীপাড়ের কৃষি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তা ভাঙানের ঝুঁকিতে পড়বে।
আবুল হাশেম আরও বলেন, আগে কয়েকবার নদীপাড়ের মাটি লুট করতে বাকা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন ফরজ ও আলীপুর গ্রামের গরুর ব্যাপারী মিজানুর রহমানসহ কয়েকটি দল এসছিল। প্রতিবাদ করায় তারা চলে যায়। ওই চক্রের সদস্যরা এবার ঢাকার ফাইজা ট্রের্ডাস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্তি করে ভৈরব নদীপাড়ের ৫ কিলোমিটার মাটির ৬০ শতাংশ ৮ লাখ টাকায় কিনেছে বলে দাবি করছে। তারা প্রমাণ হিসেবে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলামের স্বাক্ষর করা একটি কাগজ দেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাইজা টের্ড্রাসের শামসুর হক বলেন, আমরা টাকা দিয়ে মাটি কিনেছি ‘আমাদের মাটি কাটার জন্য ইউএনও অনুমতি দিয়েছেন।’ তিনি ইউএনওর স্বাক্ষর করা একটি কাগজ দেখান। পরবতীতে সাব ঠিকাদার শামসুর হক আমাকে চাকুরী থেকে বাতিল করাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি প্রদান করছে। এমন কি বাকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন ফরজ ও মিজানুর সকাল থেকে আমাকে ফোনে মারধর করার হুমকি দিচ্ছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন বলেন,নদী খনন করেছে এ জন্য আমরা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।কিন্তু মাটি খনন শেষ হতে না হতেই ইউএনও সাহেব কি ভাবে মাটি বিক্রির অনুমতি দেয় এটা আমাদের জানা নেই । জমি আমাদের মাটি আমাদের আমরা এক গাড়ি মাটি নিয়ে যেতে দেব না যত দিন নদীর পাড় বাদা না হবে তত দিন মাটি নিতে দিব না । পাড় বাধার পর যে মাটি থাকবে সেই মাটি নিবে তাতে আমাদের কোন অভিযোগ নেই । কিন্তু পাড় বাধা শেষ না হতেই মাটি বিক্রি করবে এটা আমরা সহ্য করবো না।
ফাইজা টের্ড্রাসের মালিক মোঃ শামচুর হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি সরকারি ভাবে টাকা জমা দিয়ে মাটি নিচ্ছি আমার কাছে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার চালান আছে এবং ইউএনও সাহেবের অনুমতি পত্র আছে। আমার টাকা অনুপাতে আমাকে যেখান থেকে মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছে আমি সেখান থেকে মাটি কাটছি। আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি কোন ঝামেলা করতে আসিনি আর আমি কাউকে হুমকি ধামকি প্রদান করিনি ।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আগে লোকজন চুরি করে মাটি বিক্রি করত। তখন কেউ অভিযোগ করত না। এখন সরকারিভাবে নিয়ম অনুযায়ী মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারি রাজাস্বে অর্থ জমা হচ্ছে। এতে অনেকেই রাগানিত্ব হচ্ছে। কারণ তারা চুরি করে মাটি বিক্রি করতে পারছে না। সরকারি নিয়মনুযায়ী মাটি বিক্রি করা হয়েছে এবং নদীর পাড় বাধার অবশিষ্ঠ মাটি দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় কৃষক হাফিজুল, আক্কাস, আকালে, নুরী, আলী কদর, মুবারেক ,বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন, শিক্ষক আবুল হাসেমসহ প্রায় দুইশতাধীক মানুষ এই মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন ।