ঝিনাইদহের গরিবের বন্ধু, মানবিক ও চিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন কার্ডিওলজি স্পেশালিষ্ট ডাঃ প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ। প্রাইভেট চেম্বারেও বিনামূল্যে অসহায় দরিদ্র রোগী দেখে শুধু জেলা শহরে নয় পুরো জেলায় মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবুও লেশ মাত্র অহংকার নেই এ চিকিৎসকের মনে। সদালপী সাদা মনের মানুষ হয়েও তিনি সব সময় নিজেকে আড়াল রাখতেই পছন্দ করেন । ব্যতিক্রমী এ মানুষটি আবারও ঝিনাইদহে ফিরে এসে চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় সহকর্মী, রোগী আত্মীয়-স্বজন, সুশীল সমাজ ও গুণীজনের প্রশংসা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী আব্দুল আজিজ বলেন, বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসক প্রসেনজিৎ বিশ^াসের চেম্বারে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এসেছিলাম। তার রোগী দেখার ফিস দেওয়ার মত টাকা আমার কাছে ছিলো না। পরে চিকিৎসক বিষয়টি জানতে পেরে আমাকে চেম্বারে ডেকে বিনা টাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এমনকি শারীরিক যত্নে নানা পরামর্শ দেন। সেই সাথে আমাকে আশ^স্ত করেন তার চেম্বারে টাকার অভাবে কোন রোগী চিকিৎসা সেবা না নিয়ে ফিরে যাবে না। তার এমন মহতি উদ্যোগে আমরা ঝিনাইদহ বাসী ধন্য। এমন চিকিৎসক যেন প্রতিটি জেলায় জেলায় তৈরি হয় সেই কামনা করি। তাহলে কোন অসহায় দ্ররিদ্র মানুষ আর বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে আসা রোগী বাপ্পি হোসেন জানান, বুকের ব্যাথা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছিলাম। এছাড়াও অনেক চিকিৎসক দেখিয়ে শারীরিক কোন উন্নতি না হওয়ায় ঝিনাইদহ এসে এই চিকিৎসকের সেবা নিয়ে আমি অল্প সময়ে সুস্থ হয়েছি। বর্তমানে আমি চিকিৎসকের পরামর্শে শারীরিকভাবে সুস্থ আছি।
এ বিষয়ে ডাঃ প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ বলেন, বাবার ইচ্ছে ছিলো আমাকে ডাক্তারি পড়ানো। ছোট বেলা থেকেই সেভাবে লেখাপড়ার সহযোগীতা করেছেন আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা। আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই মনে হয়েছে আমি দেশ ও সমাজের মানুষের সেবা করবো। সেই থেকে বাবার ইচ্ছে আর আমার স্বপ্ন নিয়ে ডাক্তার হবার প্রাণপন চেষ্টা করে চলি। প্রথমে আমি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করে ৩২ তম বিসিএস এ সুপরিশ প্রাপ্ত হই। পরে ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য বিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করে দীর্ঘ ৫ বছর দায়িত্ব পালন করি। এরপর উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে ডি-কার্ড কোর্সে ভর্তি হয়ে পাস করি। পরে কার্ডিওলজি তে এফসিপিএস পার্ট-১ পাস করে বাংলাদেশ জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এ্যাসিস্টেন্ট রেজিস্টার হিসেবে ৩ বছর চাকুরি করি। কিন্তু নিজের এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করে ঢাকার লোভনীয় পদ ও উন্নত সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্বেও আমি ঝিনাইদহে ফিরে এসেছি। বর্তমানে আমি এখন জেলার শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত আছি। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে জাতীর শ্রেষ্ঠসন্তান সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমার কাছে ি চকিৎসা সেবা নিতে কোন টাকা লাগবেনা বলে তিনি জানিয়েছেন।
চিকিৎসক এমন একটা পেশা যা সহজেই মানুষের কাছাকাছি এসে প্রত্যক্ষভাবে সেবা করা যায়। তাই জীবনে যতদিন বেচে থাকবো মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করে যাবো। চিকিৎসক ঠিকই আমি হয়েছি কিন্তু কতটুকু মানুষ হতে পেরেছি সেটা আমার অজানা।