ঝিনাইদহের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে প্রসূতি মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। গত দেড়মাসে ৭ জন প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অদক্ষ চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাব থাকায় বাড়ছে এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, ঝিনাইদহ শহরের শামীমা ক্লিনিকে দুজন, হাসান ক্লিনিকে একজন, আরাপপুর রাবেয়া হাসপাতালে একজন, হামদহ প্রিন্স হাসপাতালে একজন, তাছলিম ক্লিনিকে একজন ও কালীগঞ্জের দারুস শেফা ক্লিনিকে একজন প্রসূতি মারা গেছেন।
গত ২৬ মার্চ শৈলকূপা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের শারমিন বেগম নামের এক প্রসূতি ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার রাবেয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে সিজার করা হয়। শিশু ও মা সুস্থ ছিল। তবে কয়েক ঘণ্টা পর প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে ও প্রসাব বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রোগী কোমায় চলে যায়।
প্রসূতির স্বামী আল আমিন জানান, অ্যাম্বুলেন্সে করে যশোরে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে একটি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। চার দিন পর মারা যায়।
হালিমা খাতুন নামে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের এক প্রসূতিকে ৪ এপ্রিল শহরের প্রিন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার স্বামী হাবিবুর রহমান জানান, দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে সিজার করা হয়। সিজারের ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এরপর প্রসূতির কিডনি বিকল হয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান।
গত ৩০ মার্চ হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার তৈলটুপি গ্রামের এনামুল কবিরের স্ত্রী লাভলী বেগমকে কালীগঞ্জ শহরের দারুসশেফা হাসপাতালে সিজার করা হয়। সিজারের পর মা ও শিশু সুস্থ ছিল। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে একই ভাবে মারা যায়।
গত ১২ এপ্রিল হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবিতপুর গ্রামের রিনা থাতুনকে শহরের শামিমা ক্লিনিকে সিজার করা হয়। প্রসূতির স্বামী আনারুল ইসলাম বলেন, বেলা ১২টার দিকে সিজার করা হয়। এটি ছিল দ্বিতীয় সিজার। প্রসূতি সুস্থ ছিল। তিনি খাবারও খান। তবে সিজারের দুই ঘণ্টা পর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হতে থাকে। পাঠানো হয় ঢাকায়। সেখানেই তিনি মারা যান।
১৬ এপ্রিল শামীমা ক্লিনিকে শৈলকূপা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের লিপি খাতুনকে সিজার করা হয়। সিজারের কয়েক ঘণ্টার পর তার কিডনি ও লিভার অচল হয়ে মারা যান।
২৫ এপ্রিল ঝিনাইদহ শহরের ডাক্তার হাসানুজ্জামানের ক্লিনিকে সিজারের পর আকলিমা খাতুন নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। তিনি সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের একরামুল হোসেনের স্ত্রী। মৃত প্রসূতির বাবা আকরাম হোসেন জানান, গত বুধবার সকালে তার মেয়েকে ডা. হাসানুজ্জামানের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে সিজার করা হয়। সিজারের পর মা ও শিশু ভালো ছিল। কয়েক ঘণ্টা পর প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর হাসানুজ্জামান ক্লিনিকের সবাই গা ঢাকা দেন।
৭ মে ঝিনাইদহ শহরের তাছলিম ক্নিনিকে সিজারের পর নাসরিন খাতুন নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়।
চলমান পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে সিভিল সার্জন শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, সিজার করার সময় যেসব ওষুধ কিংবা স্যালাইন ব্যবহার করা হয় সেগুলো ভেজাল বা নকল- কোনো কোনো ডাক্তারের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্যালাইনসহ ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে ওষুধ প্রশাসনের কাছে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল এখনো পাওয়া যায়নি।
তবে সিভিল সার্জন দাবি করেন, ক্লিনিকগুলোতে অপারেশনের মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। যে কারণে মৃত্যুর হার বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জনদের সিজার করার সময় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পোস্টঅপারেটিভ কেয়ার ছাড়া অপারেশন করা যাবে না বলেও ক্লিনিক মালিকদের কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে মানহীন ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঝিনাইদহ জেলায় বেসরকারি ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৮০টি।