ঝিনাইদহে ৭ দিনের ব্যবধানে খুন হয় এক নারীসহ তিন জন। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে পুলিশ সহ সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। একই রকম হত্যাকান্ডের ধরণ দেখে পুলিশ বিশেষ পরিকল্পপনায় মাঠে নামে।
এরই মধ্যে গত ১০ই ফেব্রুয়ারী সদর উপজেলার পোড়াহাটী গ্রামে ধর্ষনের পর খুন করা হয় বিবিজান নেছা (৪৫) নামে এক নারী। এ ঘটনায় জনতার হাতে আটক হয় ইয়াদ আলী মোল্লা নামে এক খুনি। পুলিশ আদালতের মাধ্যমে ৫ দিনের রিমান্ড চায়। বিজ্ঞ আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
বিবিজান নেছা হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে বিকৃত যৌনাচার থেকে ইয়াদ আলীর সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠার ভয়ংকর এক গল্প। কি ভাবে সে একে একে তিনটি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তার বর্ননা দেন ঘটনাস্থলে গিয়ে। তার এই বর্ণনা শুনে চমকে ওঠে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সিরিয়াল কিলার ইয়াদ আলী নড়াইল জেলা শহরের বিলডুমুরতলা গ্রামের মৃত চাঁন মোল্লার ছেলে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার জানান, গত ১০ই ফেব্রুয়ারী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে বিবিজান নেছা (৪৫) নামের এক নারীকে ধর্ষনের পর তাকে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে ইয়াদ আলী মোল্লা। পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাকে আটক করে র্যাবে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় ওই দিন নিহতের ছেলে আবু জাফর বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
এর আগে গত ৬ই ফেব্রুয়ারী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেঁতুলতলা এমকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে ইলিয়াস আলী পাটোয়ারি ও ৯ ফেব্রয়ারী লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিঁড়ি ঘরের নিচ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার ধরণ এক রকম দেখে সন্দেহ হলে পুলিশ ওই দুই হত্যার সাথে জড়িত কিনা তা নিয়ে ইয়াদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
এক পর্যায়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করে ইয়াদ আলী, সে ওই দুই হত্যাকান্ডের সঙ্গেও জড়িত। ইয়াদ আলীর দেয়া বর্ণনার উদ্বৃতি ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, গত ৫ই ফেব্রুয়ারী রাতে এমকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ইলিয়াস পাটোয়ারির সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে। সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে টিউবওয়েলের হাতল দিয়ে মাথায় আঘাতের পর আঘাত করে হত্যা করে চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার নুরপুর গ্রামের বৃদ্ধ ইলিয়াসকে।
এর আগে ৩ই ফেব্রুয়ারী লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঘুমন্ত অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গেও ইয়াদ বিকৃত যৌনাচারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় ইয়াদ। সেই লাশ উদ্ধার হয় ৯ই ফেব্রুয়ারী।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, আমরা তদন্ত করে ও তার হত্যার বর্ণনা দেখে নিশ্চিত হয়েছি যে বিকৃত যৌনাচার ও ধর্ষণে বাঁধা দেওয়ার কারণে ইয়াদ আলী একে একে তিনটি হত্যা করে।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, ৩টি ঘটনায় ২টিতে হত্যা মামলা ও ১ টিতে অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল। এখন ৩টি হত্যা মামলা বলে গন্য হবে।
তিনি আরও বলেন, ইয়াদ আলী আরও কোন হত্যার সাথে জড়িত কি না তবের করার চেষ্টা করছি। ইয়াদ আলী মাদক সেবন করে বিকৃত যৌনাচার করার জন্য বিভিন্ন স্থানে হানা দিত। সে নড়াইল থেকে গত ৫ মাস আগে ঝিনাইদহে আসে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।