একে পুরুষ তায় আবার মাথায় চুল কম? সাবধান! করোনাভাইরাসের হানার তালিকায় আপনি থাকতেই পারেন উপরের দিকে!
চীনের উহানে প্রথম যখন করোনার হানা শুরু হয়, তখন থেকেই বিজ্ঞানীরা খেয়াল করেছিলেন মেয়েদের তুলনায় পুরুষরা বেশ এগিয়ে আছেন সংক্রমণে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন পুরুষদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার নারীদের তুলনায় অনেক বেশি। যদিও এই রাজ্যের কিছু চিকিৎসকের মতে, এই রোগে মেয়েদের মৃত্যুহার অবহেলাজনিত কারণে বেশি। তবে বিশ্বের সার্বিক হার খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে এই রোগে সংক্রমণের হার বেশি পুরুষদের।
আমেরিকার ব্রাউন ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর কার্লোস ওয়াম্বিয়ের ও তার সহযোগীরা আবার এর নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে এক অদ্ভুত বিষয়কে সন্দেহ করতে শুরু করেন। গবেষণায় তারা প্রামাণ পেয়েছেন, যে সব পুরুষের টাক আছে (অ্যালোপেশিয়া অ্যান্ড্রোজেনেটিকা) তাদের কোভিড-১৯ সংক্রমণ গুরুতর অবস্থায় পৌঁছানোর ঝুঁকি অনেক বেশি। কার্লোস এক সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিককে জানিয়েছেন, ‘আমেরিকার চিকিৎসক ফ্র্যাঙ্ক গ্যাবরিন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর (কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু) টাকের সঙ্গে কোভিড-১৯-এর সম্পর্ক নিয়ে সমীক্ষা শুরু করার কথা ভাবি আমি ও আমার সহযোগীরা। তারপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা মৃত্যুর পরিসংখ্যান যাচাই করে দেখা গিয়েছে। টাক থাকলে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ও তা তীব্র আকার ধারণ করার ঝুঁকি অনেক বেশি।’’
হরমোনের কারসাজি
প্রথম প্রথম পুরুষদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, যেহেতু পুরুষরা বেশি ধূমপান করেন তাই তাদের শ্বাসনালী ও ফুসফুস কিছুটা দুর্বল থাকায় করোনা বেশি হচ্ছে। ইংল্যান্ডেও কোভিড-১৯-এর প্রকোপ শুরুর পর ও দেশের পাবলিক হেল্থ সংস্থা সমীক্ষা করে দেখেন যে, ওই দেশের কর্মরত পুরুষরা নারীদের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। শুরু হয় আরও জোরদার সমীক্ষা।
তখনই দেখা যায়, যে সব পুরুষের টাক আছে তারা বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সমীক্ষার পর জনস্বাস্থ্য ও জীবাণুবিজ্ঞানীরা জানান, নারী ও পুরুষদের জীবনযাত্রা, ধূমপানের অভ্যাস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভিন্নতার কারণ ছাড়াও পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন ও অ্যান্ড্রোজেন কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। টেস্টোস্টেরন আবার পুরুষালী টাক সৃষ্টির জন্য দায়ী। এই হরমোন একই সঙ্গে করোনার উপযোগী পরিবেশও তৈরি করে। তাই ছেলেদের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেন আবার কোষে কোষে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
স্পেনে যখন প্রচুর পরমাণে কোভিড-১৯ আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করেন, তখন ওয়াম্বিয়ের ও তার সহযোগী গবেষকরা লক্ষ্য করেন যে তাদের অধিকাংশেরই পুরুষালী টাক আছে। ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজি’-তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা যায়, মাদ্রিদ হাসপাতালে ভর্তি করোনা আক্রান্তদের ৭৯ শতাংশের টাক আছে এবং স্পেনের হাসপাতালে ভর্তি ৭১ শতাংশের মাথায় চুলের পরিমাণ সামান্য।
ভারতের আলিপুরদুয়ারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন যে ‘‘পুরুষদের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণে শুরুতে ধূমপানকে দায়ী করা হলেও পরে যখন দেখা গেল, ইউরোপেও পুরুষদের মৃত্যু হার বেশি তখনই সকলে এই নিয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু করলেন। কেননা, চীনে পুরুষরা বেশি ধূমপান করলেও ইউরোপে ধূমপায়ীদের সংখ্যা নারী-পুরুষ নিরিখে প্রায় সমান। তখনই শুরু হল নতুন সমীক্ষা।’’
তা হলে কি টাক থাকলেই ভয় বাড়বে?
সুবর্ণবাবুর মতে, একেবারেই তা নয়। টাক থাকলেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন এমন কথা বলার সময় এখনও আসেনি। শুধুমাত্র একটা কো-রিলেশনের ওপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন।
সুবর্ণবাবু আরও জানালেন যে প্রস্টেট ক্যানসারের সঙ্গে যেমন অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, করোনায় মেল হরমোন নিয়ে এখনও তেমন জোরদার সর্বজন স্বীকৃত সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এই পর্যবেক্ষণের উপর দাঁড়িয়ে আরও গবেষণা করলে হয়ত সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে বলে।
অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের কারণে প্রস্টেট ক্যানসার হয় বলে অ্যান্টি অ্যান্ড্রোজেন ওষুধ দিয়ে প্রস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা করে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া যায়। পুরুষ হরমোনের সঙ্গে কোভিড-১৯-এর সরাসরি সম্পর্ক জানা গেলে প্রস্টেট ক্যানসারের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করে রোগের মোকাবিলা সম্ভব বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের আশা। সূত্র: আনন্দবাজার