মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার জ্যাক ডরসি পদত্যাগ করছেন। তার স্থলে চিফ টেকনোলজি অফিসার পরাগ আগারওয়াল এখন কোম্পানির নেতৃত্ব দেবেন। সোমবার নিজেই টুইট করে এ তথ্য জানান ডরসি।
হঠাৎ কেন নেতৃত্বে পরিবর্তন
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, টুইটারে দশ বছরের অভিজ্ঞ আগারওয়ালকে নিয়োগ ২০২৩ সালের মধ্যে কোম্পানির বার্ষিক আয়কে দ্বিগুণ করার একটি কৌশল। বিনিয়োগকারীরা এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও ঘোষণার পরে টুইটারের শেয়ার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে এবং ২.৭ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে।
ডরসির চিঠি
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সিইও পরিবর্তন প্রক্রিয়া অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং ডরসি ২০২২ সালের বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায় তার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বোর্ডে থাকবেন। সোমবার কর্মচারীদের কাছে পাঠানো একটি ইমেইলে ডরসি বলেন, তিনি আগারওয়ালের নেতৃত্বের শক্তি, বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে সেলসফোর্স চিফ অপারেটিং অফিসার ব্রেট টেলরের লক্ষ্য এবং সম্ভাবনার প্রতি তার আস্থার কারণে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘আমি সত্যিই দুঃখিত… তবুও সত্যিই খুশি’, তিনি লিখেছেন। ‘এমন অনেক কোম্পানি আছে, যারা এ স্তরে পৌঁছেনি’, যোগ করে তিনি বলেন, পদত্যাগ করার পদক্ষেপ ‘আমার সিদ্ধান্ত ছিল এবং আমি এটির মালিক।’
টুইটারের অবস্থান
গত এক বছরে টুইটার দীর্ঘদিন ধরে চলা বিভিন্ন সমালোচনার অবসানে লড়াই করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ অভিযোগ ছিল, এটি নতুন বৈশিষ্ট্য প্রবর্তন করতে ধীরগতিতে কাজ করে।
ফলস্বরূপ ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে স্থান হারাচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে বার্ষিক রাজস্ব দ্বিগুণ করার লক্ষ্য টুইটার ব্যবহারকারীদের তাদের প্ল্যাটফরমের প্রতি আগ্রহী করতে কাজ করছে। এ ছাড়া এ জাতীয় ব্র্যান্ডকে খুঁজে পেতে কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনের উন্নতিও ঘটিয়েছে।
যাইহোক, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে টুইটারের শেয়ার হ্রাস পেয়েছে; যা দুটি পাবলিক কোম্পানির সিইও হওয়ার অস্বাভাবিক ব্যবস্থা শেষ করার জন্য ডরসির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে ডরসির মেয়াদে টুইটারের উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
২০০৬ : মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফরমের প্রথম পোস্টটি লেখা হয় : জাস্ট সেটিং আপ মাই টুইটার (just setting up my twttr)
২০০৮ : বোর্ড ডরসিকে বহিষ্কার করার পর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইভান উইলিয়ামস সিইও হিসাবে দায়িত্ব নেন। ডরসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৩ : টুইটারের মূল্যমান ৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
২০১৫ : ডিক কস্টোলো পদত্যাগ করার পর, ডরসি সিইও হিসাবে ফিরে আসেন।
২০১৭ : শেষ কর্মদিবসে একজন টুইটার কর্মী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিলেন, যা ১১ মিনিট পর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়।
২০১৮ : টুইটার টুইটের অক্ষর সীমা ১৪০ থেকে বাড়িয়ে ২৮০ করেছে; যা টুইটারভার্সে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
২০২০ : অ্যাক্টিভিস্ট হেজ ফান্ড এলিয়ট ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয়। ফলস্বরূপ ডরসিকে সিইও পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
২০২০ : টুইটার ইলিয়টের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়, যাতে ডরসিকে সিইও হিসাবে বহাল রাখার জন্য তিনজন নতুন পরিচালক যোগ করা হয়।
২০২১ : ক্যাপিটলে দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে, টুইটার ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে স্থগিত করে। সহিংসতার উসকানি দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি সে সময় উল্লেখ করে।
২০২১ : কোম্পানির ভাষ্যমতে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেষ তিন মাসে তাদের দৈনিক গড়ে ২১১ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে।
টুইটারের নতুন সিইও পরাগ আগারওয়াল
টুইটার (ঞডঞজ.ঘ) কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ও প্রযুক্তি প্রধান পরাগ আগারওয়ালকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যাক ডরসির স্থলাভিষিক্ত হিসাবে পদোন্নতি দিয়েছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে আগারওয়াল টুইটারে যোগদান করেন এবং এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে রয়েছেন। তিনি ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা হিসাবে নিযুক্ত হন। টুইটারের প্রযুক্তিগত কৌশল পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সফটওয়্যারের গতি বিকাশে অবদান রাখেন। সেই সঙ্গে কোম্পানিতে মেশিন লার্নিং ব্যবহারকে এগিয়ে নিয়েছেন।
ডিসেম্বর ২০১৯ সাল থেকে আগারওয়াল টুইটারে অপমানজনক ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ওপেন সোর্স আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার এবং ডিজাইনারদের স্বাধীন দল প্রজেক্ট ব্লুস্কি (Project Bluesky)-তেও কাজ করছেন। টুইটারে যোগদানের পূর্বে, আগারওয়াল মাইক্রোসফট (MSFT.O), ইয়াহু (Yahoo) এবং এটি অ্যান্ড টি ল্যাবস AT&T Labs Inc (T.N) এর গবেষণা ইউনিটে কাজ করেছিলেন।