দর্শনা সীমান্ত চেকপোষ্ট সড়ক পথে টুরিষ্ট ভিসাসহ বন্ধের আড়াই বছর পার হলেও খুলছে না দর্শনা আন্তজার্তিক চেকপোস্ট।
একই রুটে ট্রেনে মিললেও মিলছেনা সড়ক পথে। এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ১০ জেলার মানুষ।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, বিশ্বে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী করানো রুপ ধারন করলেও বাংলাদেশে ২০২০ সালের ২০ মার্চ দেখা দেয় করোনা। এরপর সরকারী নির্দেশনায় বন্ধ হয়ে যায় আন্তজার্তিক চেকপোষ্ট পথে রেল ও সড়ক পথ দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত। কিন্তু সরকারী নির্দেশনার কারণে করোনা কালীন সময়ে ভারতে বাংলাদেশী নাগরিক আটকে পড়ে। পরবর্তীতে দু’দেশের সরকারী সিদ্ধান্তে ভারত-বাংলাদেশে আটকে পড়া যাত্রীদের ফেরত নেওয়া হয়। এরমধ্যে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশী নাগরিকদের দর্শনা আন্তর্জাতিক সীমান্তে সড়ক পথে কয়েক দফায় নিজ দেশে ফেরার সুযোগ পান।
এদের সকলকে দর্শনা জয়নগর সীমান্তের চেকপোষ্টে স্বাস্থ্য বিভাগের স্থাপতি কোভিড পরিক্ষার ব্যাবস্থা করা হয়। এদের মধ্যে যিনারা কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হোটেল ও আবাসিকে কোয়ারিন্টাইনে রাখা হয়। সে সমস্ত স্থানে থাকার পর সুস্থ করে বাড়ি ফেরেন।
পরবর্তীতে করোনা কিছুটা কম হলেও ভারতীয় হাই কমিশনের গাফলতির কারনে বন্ধ থাকে দর্শনা আন্তজার্তিক চেকপোষ্ট সড়ক পথে যাত্রী যাতায়াত।
কিন্তু একই সীমান্ত দিয়ে রেল পথে মৈত্রী ট্রেনে টুরিষ্ট ভিসার যাত্রীরা ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের সুযোগ পেলেও দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছেদর্শনা আন্তর্জাতিক চেকপোষ্টের সড়ক পথ।
ফলে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, রাজবাড়ী, মাগুরা ফরিদপুর, রাজশাহী সহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েটি জেলার মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যে কারণে ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসার প্রয়োজনে দর্শনা জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট হয়ে সীমান্ত পথে ভারত যেতে পারছে না।
দেশের সকল সীমান্ত পথে নতুন করে ভিসা চালু থাকলেও দর্শনা জয়নগর চেকপোষ্ট হয়ে ভারত ভ্রমণ ও চিকিৎসা সেবা সহ অন্যান্য প্রয়োজনে যাতায়াতে বাঁধা থাকায় অনেক পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌছাতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রী-সাধারনকে।
এতে করে একদিকে সময়ের অপচয় ও অপরদিকে অর্থের তছরুপ।
দর্শনা ইমিগ্রেশন সূত্রে জানাযায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে ২০২০ সালের ২০ মার্চ দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল বন্দরের মাধ্যমে ভারতীয় মালামাল আমদানি ও স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সব ধরনের ভিসার পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্থগিত করে ভারতীয় হাইকমিশন। কিছুদিন পর বাধ্যতামূলক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথে মুখে মাস্ক পড়ে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মালামাল আমদানি শুরু হয়। ২০২১ সালের ১৭ মে থেকে ভারতে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থলপথের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনার একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুধু মেডিকেল ও বিজনেস ভিসায় দর্শনার জয়নগর থেকে ভারতের গেদে হয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত করার অনুমতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ৫ ডিসেম্বর তাও বন্ধ করে দেয়া হয়।
সর্বশেষ গত ২৯ মে ঢাকা- কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশন দিয়ে চলাচল শুরু হলেও অদ্যাবধি দর্শনা-গেদে স্থলপথে কোনো ভিসা চালু করা হয়নি। কুষ্টিয়া আড়ুয়া পাড়ার এক বয়স্ক মহিলা পাসপোর্টধারী যাত্রী দর্শনা চেকপোষ্টে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের জানান, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী সহ এ অঞ্চলের ৮/১০টি জেলার মানুষ বিভিন্ন ভিসায় দর্শনা-গেদে স্থলপথে যাতায়াত করতে না পেরে বাধ্য হয়ে যশোরের বেনাপোল ও হরিদাসপুর দিয়ে ভারত যেতে হচ্ছে। এতে তীব্র তাবদহের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
এসময় অনেক যাত্রী তীব্র তাবদহের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়াও যাতায়াত খরচ গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। তিনি জানান, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর সহ আশপাশের জেলা থেকে দর্শনা চেকপোস্টে আসতে খরচ হয় মাত্র ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর দর্শনা থেকে ভারতের গেদে রেল স্টেশনে পায়ে হেটেই যাওয়া যায়। সে হিসেবে কুষ্টিয়া থেকে যশোরের ভাড়া একশ টাকা, যশোর থেকে বেনাপোলের ভাড়া ৫০ টাকা, বেনাপোল থেকে ভারতের বনগাঁও রেলস্টেশনে পৌঁছাতে জন প্রতি খরচ দেড়শ’ টাকা । দর্শনা ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এস,আই আবু নাঈম জানান, ভারতীয় নাগরিকরা যে কোনো ভিসায় গেদে হয়ে দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে। তবে বাংলাদেশীদের এ পথে নতুন করে কোনো ভিসা দেয়া হচ্ছে না।
দর্শনা সি,অ্যান্ড,এফ এসোসিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান হাবু বলেন, দর্শনা-গেদে স্থলপথ দিয়ে ভিসা চালু করা হলে সরকার যেমন হাজার হাজার টাকা রাজস্ব পাবে। সেই সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর যাত্রীর চাপ কমার পাশাপাশি ভোগান্তির হতে রেহায় পাবে। তাছাড়া দর্শনা থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ১১৮ কিলোমিটার।
দর্শনা কাস্টমসের এক কর্মকর্তা জানান, কোভিডের আগে এ পথে প্রতিদিন প্রায় দেড়-দুই হাজারের ওপরে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতো। কিন্তু ভিসা চালু হলে আগের মতো পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ চেকপোস্টে একজন যাত্রীর জন্যও কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ও বিজিবি ফুলটাইম কাজ করে। ভালো সেবার কারণে সড়ক পথে দর্শনা আন্তজার্তিক চেকপোস্টের দিকে তাকিয়ে আছে চুয়াডাঙ্গা জেলা সহ ১০ জেলার মানুষ।