কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল এবং বিকালের ঠান্ডা হাওয়া শীতের আগমনী বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে। শীত আনন্দ এবং উৎসবের ঋতু হলেও এর অপ্রীতিকর দিকটির কথা যেন ভুলে না যাই। এ মৌসুমের ঠান্ডা এবং শুষ্ক বাতাস মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে। সাধারণ সর্দি, ফ্লু এবং ফুসফুসের কিছু রোগ শীতকালে বেশি দেখা যায়। মৌসুমি এসব রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে লিখেছেন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং ভারতের মাদ্রাজ শ্রী বালাজী মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (চেন্নাই) ভিজিটিং প্রফেসর ডা. এইচ. এন. সরকার
সাধারণ ঠান্ডা :
এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা ২০০টিরও বেশি ভাইরাস দ্বারা হতে পারে; রাইনোভাইরাস দিয়ে বেশি হয়। এটি বছরের যে কোনো সময় হতে পারে, তবে শীতে সর্বাধিক ও ঘন ঘন সাধারণ ঠান্ডা দেখা যায়। শীতকালীন শুষ্ক এবং ঠান্ডা আবহাওয়া রাইনোভাইরাসের প্রজনন ও বিকাশের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট পরিবেশ। এ ভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। ভাইরাস কোনো বস্তুতে লেগে থাকলে সেসব বস্তু যেমন দরজার হাতল, বিদ্যুতের সুইচ স্পর্শ করলেও শরীরে তা প্রবেশ করতে পারে। নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা চুলকানি, গলা ব্যথা, কাশি, নাক বন্ধ থাকা, মাথাব্যথা এবং কখনো কখনো হালকা জ্বর সাধারণ ঠান্ডার উপসর্গ। এ উপসর্গগুলো ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে বেশি হয় এবং এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে যায়।
প্রাথমিক প্রতিকার :
সাধারণ সর্দি বিরক্তিকর হতে পারে, তবু স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন এবং দুই থেকে চার দিনের মধ্যে এটি কমে যাবে। যদি এর চেয়ে বেশি সময় থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। সাধারণ ঠান্ডা প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো; যা ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং সাধারণ সর্দির রোগী থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায়ের মাধ্যমে সম্ভব। এটি করোনাভাইরাস এসে আমাদের শিখিয়েছে। যদি পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হয়, তাহলে তাকে আলাদা থাকার এবং তার ব্যবহার্য থালাবাসন আলাদা করার ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব বস্তুপৃষ্ঠ থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে সেগুলো জীবাণুনাশক দিয়ে বারবার পরিষ্কার করতে হবে। যদি সাধারণ সর্দি হয়, তাহলে হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিসু বা রুমাল ব্যবহার করুন। রুমাল না থাকলে হাতের কনুইয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি বা কাশি দিন। যদি কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ভালো বোধ করেন, এক বা দুই দিনের মধ্যে কাজে ফিরে যান তবে ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিবেন এবং হাঁচি-কাশি সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন। জ্বর বেশি হলে এবং দীর্ঘায়িত হলে, কাশিতে হলুদ কফ বের হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঠান্ডার চিকিৎসা :
সাধারণ সর্দির কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিকার নেই। বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি, নাকের ডিকনজেস্ট্যান্ট, কাশির সিরাপ এবং অ্যান্টিহিস্টামিন রোগ থেকে সেরে ওঠাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ঠান্ডা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজ করে না এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ না হওয়া পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই।
ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা :
ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ভাইরাসজনিত রোগ। প্রতি বছর জনসংখ্যার ৫ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৩ থেকে ৫ মিলিয়ন লোক গুরুতর ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয় এবং ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। মৃত্যু সাধারণত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে ঘটে, যেমন ছোট শিশু, বয়স্ক এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের রোগীরা। শীতকালে ফ্লুর সংক্রমণ খুব বেশি বিধায় এটিকে সাধারণত ফ্লু ঋতু (Flu season) বলা হয়। এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু কমে যেতে পারে। ফ্লু বায়ুবাহিত রোগ, ফ্লু ভাইরাস হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। দূষিত পৃষ্ঠতল স্পর্শের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। ফ্লু ভাইরাস ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকে, এজন্যই প্রতি বছরই ফ্লু ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে হয়, পুরোনো ভ্যাকসিন কখনোই পুরোপুরি কার্যকর হয় না। ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ ফ্লু। ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষ, গর্ভবতী এবং ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)সহ দীর্ঘমেয়াদি রোগের রোগীরা ফ্লু’র ঝুঁকিতে রয়েছে।
উপসর্গ বা লক্ষণ :
ফ্লু প্রাথমিকভাবে একটি সাধারণ ঠান্ডা হিসাবে ভুল হতে পারে, এক্ষেত্রে দ্রুত খুব বেশি জ্বর হয়। এ ছাড়া কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, শরীরের ব্যথা এবং খুব দ্রুত ক্লান্তি বা অবসাদ চলে আসে। বমি বা ডায়রিয়াও হতে পারে। জ্বর এবং ব্যথা তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে কমে যায় কিন্তু কাশি এবং সাধারণ ক্লান্তি দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় থাকতে পারে।
চিকিৎসা :
উপসর্গ শুরুর পর কমপক্ষে পাঁচ দিন এবং জ্বর কমে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পর কাজে যোগ দিতে পারেন। ফ্লু থেকে নিউমোনিয়া সবচেয়ে বেশি হয় এবং হার্টের পর্দার প্রদাহ মায়োকার্ডাইটিস হচ্ছে মারাত্মক জটিলতা। ফ্লু প্রতিরোধ করার সর্বোত্তম উপায় হলো ফ্লু ভ্যাকসিন এবং ফ্লু ভ্যাকসিন এক বছরের জন্য ফ্লুর বিরুদ্ধে ভালো সুরক্ষা দেয়। এজন্য প্রতি বছর ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন নিতে পারেন, যা নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। লক্ষণগুলো খারাপ হলে, নতুন উপসর্গ দেখা দিলে বা যদি এমন কোনো অবস্থা বা পরিস্থিতি থাকে যা ফ্লু’র জটিলতার ঝুঁকিতে ফেলে দেয়, এ অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি পান এবং প্যারাসিটামল উপসর্গগুলো উপশম করে। গুরুতর ক্ষেত্রে, ফ্লুর স্থায়ীত্ব, তীব্রতা এবং জটিলতার ঝুঁকি কমাতে ওসেল্টামিভিরের মতো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে। উপকার পেতে হলে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলো সাধারণত উপসর্গ শুরুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শুরু করতে হয়।
ব্রঙ্কিওলাইটিস, লক্ষণ ও প্রতিকার :
এটি একটি ভাইরাসজনিত শ্বাসনালির সংক্রমণ যা রেসপাইরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) দ্বারা সৃষ্ট। যদিও বিভিন্ন ভাইরাস ব্রঙ্কিওলাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। এটি শিশুদের বেশি হয় এবং শীতকালে বেশি দেখা যায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে নাক বন্ধ হওয়া, কাশি, মৃদু জ্বর যা সাধারণ সর্দি বলে মনে হতে পারে। এটি আরও গুরুতর হয়ে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে এবং মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। শিশুর যদি শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
সাইনোসাইটিস, লক্ষণ ও প্রতিকার :
শীতকালে সাইনাসের সমস্যা একটি সাধারণ ব্যাপার। যখন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকে এবং সঠিকভাবে বায়ু চলাচল করতে পারে না, তখনই সাইনাসের সমস্যা দেখা দেয়। নাক বন্ধভাব (Nasal congestion), মাথাব্যথা, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়ার পাশাপাশি নাক ডাকার উপসর্গ শীতের সময় মানুষকে দুর্বিষহ করে তোলে। এ সময় সাইনোসাইটিস থেকে মুক্ত থাকার জন্য ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন, দুপুরের দিকে ঘরের দরজা-জানালা খুলে দিন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং প্রচুর তরল পান করুন।
গলাব্যথা, লক্ষণ ও প্রতিকার :
গলাব্যথা সারা বছরই হতে পারে, তবে শীতকালে এর প্রকোপ বেশি। এটি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দুটো দিয়েই হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল গলাব্যথা সাধারণত স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়ে থাকে এবং শীতকালে যে গলাব্যথা হয় তা সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। তাপমাত্রার পরিবর্তন, উষ্ণ কক্ষ থেকে বাহিরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় বের হলে বা ঠান্ডার মধ্যে যদি ফ্রিজের পানি পান করে, তাহলে গলাব্যথা হতে পারে। এর সহজ এবং দ্রুত প্রতিকার হলো-গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করা। এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে এক চা চামচ লবণ দিয়ে গড়গড়া করুন। এটি সংক্রমণ নিরাময় করবে না, তবে গলাব্যথা কমিয়ে দিবে। কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ভাইরাসজনিত গলাব্যথা ভালো হয়।
একিউট ব্রঙ্কাইটিস, লক্ষণ ও প্রতিকার :
ব্রঙ্কাইটিস হলো ব্রঙ্কাস বা শ্বাসনালির প্রদাহ। একিউট ব্রঙ্কাইটিস সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণ যেমন সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লু ভাইরাস সংক্রমণের পরে হয়ে থাকে, কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার কারণেও হতে পারে। শীতকালে প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ৫ থেকে ৬ শতাংশ শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়। যারা ধূমপান করেন, যাদের অতিরিক্ত অ্যালার্জি, সাইনোসাইটিস, বর্ধিত টনসিল বা অ্যাডিনয়েড থাকে, তাদের একিউট ব্রঙ্কাইটিসের ঝুঁকি বেশি। ঠান্ডা বা ফ্লু রোগের উপসর্গ গা ব্যথা, মাথাব্যথা, ঠান্ডা লাগা, নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং গলাব্যথা কমে যাওয়ার পর শুকনো কাশি দেখা দেয়, যা অত্যন্ত বেশি এবং বিরক্তিকর; শত চেষ্টা করেও কাশি বন্ধ করা যায় না। কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এ রোগের কারণে কাশিতে পাতলা থুতুর মতো সাদা কফ ওঠে; ব্যাকটেরিয়ার সেকেন্ডারি সংক্রমণ হলে পাকা বা হলুদ কফ হয়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে নিউমোনিয়া না হলে একিউট ব্রঙ্কাইটিস নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। ফুটন্ত পানির বাস্প টানলে, কাশি সিরাপ এবং ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারে উপসর্গগুলো সহজেই উপশম হয়। বেশিরভাগ লক্ষণ প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়, তবে কাশি কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে।
যদি উপসর্গ উপশম না হয়, যদি আরও খারাপ হয়ে যায়, দ্বিতীয় ধাপে জ্বর আসে বা হলুদ কফ বের হয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।
পুরাতন শ্বাসযন্ত্রের রোগে শীতের প্রভাব :
সিওপিডি (COPD) বা হাঁপানির (Asthma) মতো শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শীতকালে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে; যার অনেক কারণ রয়েছে। ঠান্ডা এবং শুষ্ক বাতাস শ্বাসনালিকে সংকুচিত (spasm) করে, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ ছাড়াও কিছু কিছু হাঁপানির রোগীর ঠান্ডা অ্যালার্জি থাকার কারণে হাঁপানি বেড়ে যায়। ঠান্ডার প্রভাবকে এড়ানোর জন্য বাইরে যাওয়ার সময়, উষ্ণ পোশাক এবং স্কার্ফ দিয়ে বুক এবং মুখ ঢেকে বের হবেন।
দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস :
শ্লেষ্মা-উৎপাদনকারী কাশি বছরে কমপক্ষে তিন মাস, পরপর দুই বছর স্থায়ী হলে তখন তাকে দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস বলে। ধূমপানই এর প্রধান কারণ; যদিও রান্নার ধোঁয়া, অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের পরিবেশ দূষণের ফলেও এটা হতে পারে। শীত মৌসুমে এর ঠান্ডা এবং কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এর উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে, যাকে হঠাৎ তীব্রতা বৃদ্ধি (Acute exacerbation) বলা হয়। দীর্ঘস্থায়ী কাশি, বুকে চাপভাব এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এর প্রধান উপসর্গ। ঠান্ডা এবং কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় এর উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে, তাই বাইরে বের হওয়ার সময়, উষ্ণ পোশাক এবং স্কার্ফ দিয়ে বুক এবং মুখ ঢেকে বের হবেন। চিকিৎসার লক্ষ্য হলো উপসর্গ কমানো যাতে সহজে শ্বাস নেওয়া যায়। শ্বাসনালিকে প্রসারিত করার ওষুধ মুখে বা ইনহেলারের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। মাঝারি বা তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়, জ্বর বা হলুদ কফ বের হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। গুরুতর ক্ষেত্রে, হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। যদি ধূমপান করেন, তাহলে ধূমপান এখনই ত্যাগ করুন। ধূমপান ত্যাগই এ রোগের গতিবিধিকে পরিবর্তন করতে পারে।
কানে তীব্র সংক্রমণ :
এ সংক্রমণ একটি শীতকালীন সাধারণ রোগ। স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি এবং হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা মধ্যকর্ণে প্রদাহের ফলে এ স্থানে তরল পদার্থ জমা হয়। এটা পরে পুঁজে পরিণত হয়ে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে বের হয়ে আসতে পারে। কানের সংক্রমণের জন্য অন্যান্য ঝুঁকিগুলো হলো ঠান্ডা, ধূমপান, সাইনাসের সংক্রমণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন। কানে অস্বস্তি, কানে তীব্র ব্যথা এবং শ্রবণশক্তি হ্রাস হলো এর প্রধান উপসর্গ।
যে কোনো ধরনের কানের সংক্রমণ নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করে প্রতিরোধ করা যায়-
* গোসল বা সাঁতারের পর কান সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিন।
* ধূমপান পরিহার করুন।
* টিকা দেওয়া আপ টু ডেট আছে কিনা নিশ্চিত করুন।
* ওষুধের মাধ্যমে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করুন।
* সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট কানের সংক্রমণ ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়, তাই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা আবশ্যক। ভাইরাস হলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। যদি কানের সংক্রমণের সঙ্গে ব্যথা থাকে, তাহলে চিকিৎসক প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো ব্যথা উপশমকারী ওষুধ দিতে পারেন।
মাথাব্যথা ও প্রতিকার :
ঠান্ডা বাতাস মাঝে মাঝে মাথাব্যথাকে উসকে দিতে পারে। ঠান্ডা বাতাস মাইগ্রেনের আক্রমণ ঘটাতে পারে, সাইনাসের সংক্রমণ করতে পারে যা শীতকালে মাথাব্যথার প্রধান কারণ। নিজেকে একটি উষ্ণ মাফলার বা স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে চলাফেরা করুন। যদি দু-চাকার গাড়ি চালান, শীতকালে মাথাব্যথা থেকে রেহাই পেতে চাইলে ভালো হেলমেট এবং মাফলার ব্যবহার করুন।
ত্বকে চুলকানি ও প্রতিকার :
শীতে কম আর্দ্রতার সঙ্গে ঠান্ডা তাপমাত্রা শুষ্ক চুলকানি সৃষ্টি করে। সংবেদনশীল ত্বকের অনেকেরই শীতের সময় চুলকানি হয়। যত্ন নেওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো প্রতিদিন রাতে নারিকেল, জলপাই বা বাদাম তেল ব্যবহার করা।
ঠান্ডাতে ঘা ও প্রতিকার :
শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়ার তীব্রতার কারণে শীত মৌসুমে ঠান্ডা ঘা (cold sore) বেশি হয়, যদিও এটি বছরের যে কোনো সময় হতে পারে। শুষ্ক এবং ঠান্ডা বাতাসে ঠোঁট শুকিয়ে যায়; যা তাদেরকে হার্পিস (Herpes) ভাইরাসের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে। ঠোঁটে এবং ঠোঁটের কোণে ঠান্ডা ঘা (cold sore) সৃষ্টি হয়। মানসিক চাপের মধ্যে থাকলেও ঠান্ডা ঘা বেশি দেখা যায়। শীতকালে নিজের যত্ন নিয়ে ঠান্ডা ঘা হওয়ার আশংকা কমাতে পারেন। পর্যাপ্ত পুষ্টি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং বিশ্রাম ঠান্ডা ঘা হওয়ার আশংকা কমাতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ কমাতে প্রতিদিন পার্কে বেড়াতে যান, সিনেমা দেখুন এবং মনকে প্রফুল্ল রাখুন।
শুষ্ক ত্বক
শীতে সাধারণ সমস্যার মধ্যে একটি হল ত্বক শুষ্ক হওয়া। বাতাসের আর্দ্রতা কম হয় বলে এটি হয়। ঠান্ডা আবহাওয়া ত্বকের ক্ষতি করে, ফলে ত্বক চুলকায় এবং শুষ্ক হয়ে যায়। ঠোঁট ও পায়ের গোঁড়ালি ফেটে যায়। শুষ্কতার কারণে ফাটলযুক্ত ত্বক, রক্তপাত, ব্যথা এবং সংক্রমণ হতে পারে। এজন্য নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং লোশন, ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার, পেট্রোলিয়াম জেলি বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো সময় হল স্নান বা গোসলের পর, যখন ত্বক আর্দ্র থাকে এবং ঘুমানোর সময়। গরম পানির বদলে উষ্ণ পানি গোসলে ব্যবহার করুন। খুব গরম পানি ত্বককে আরও শুষ্ক এবং চুলকানির প্রবণতা সৃষ্টি করে। ইউরিয়া ক্রিম ফাটা চামড়া সারাতে সহায়তা করে।
জয়েন্টে ব্যথা
শীতে অনেকে জয়েন্টে ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া রোগে ভোগেন। এটি আর্থ্রাইটিস রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। হঠাৎ তাপমাত্রা বেশি কমে গেলে জয়েন্টের ব্যথা শুরু হতে পারে, যা চলনশক্তিহীন বা স্থবির করে দিতে পারে। শীতের মাসে অনেক মানুষ একটু হতাশায় (Depression) ভোগেন এবং এর ফলে তারা ব্যথাকে আরও তীব্রভাবে অনুভব করে। জয়েন্টের ব্যথা ও মাংশপেশি শক্ত হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে- নিজেকে এবং নিজের হাত-পা গরম রাখা, ভারী গরম কাপড়ের পরিবর্তে দুই বা তিন জোড়া পাতলা পোশাক পরুন, ব্যায়াম করুন তবে অতিরিক্ত নয়, রৌদ্রস্নান করাও জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায়।