আবাহনীর সামনে সমীকরণটা ছিল সহজ। জয় পেলেই ডিপিএলের ২৩তম আর লিস্ট ‘এ’ স্বীকৃতির পরে পঞ্চম শিরোপা উঠবে হাতে, প্রতিপক্ষ শেখ জামাল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য আবাহনী হারায় সেরা ১০ ক্রিকেটারকে। আর শেখ জামাল দলকে শক্তিশালী করতে বিদেশের মাটি থেকে উড়িয়ে আনে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে।
গতকাল সাভারের বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে একাদশ সাজাতেই যেন যুদ্ধ করতে হয় খালেদ মাহমুদ সুজনের আবাহনীকে। শেষ মুহূর্তে জাতীয় দল থেকে ফেরত পাওয়া তানজিম হাসান সাকিব, তানভীর ইসলাম ও আফিফ হোসেন ধ্রুবকে পেয়ে যেন কিছুটা স্বস্তিই পান কোচ সুজন। আর তাতেই করেন বাজিমাত। বলা চলে আবাহনীর ‘দ্বিতীয় দল’ মাঠে নামিয়েও সফল হলেন তিনি। সাকিবদের শেখ জামালকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ২ ম্যাচ হাতে রেখেই এবারের ডিপিএল শিরোপা নিশ্চিত করেছে আবাহনী।
এই জয়ের পরে অনেকে বলছেন, আবাহনীর জার্সিতে যদি কোনো নতুন খেলোয়াড়কেও মাঠে নামানো হয়, তাহলে তারাও জয় তুলে নিতে পারবে। ক্লাবটির জার্সির ক্ষমতাই নাকি এমন! তবে সেটি যাই হোক, গতকাল দলটি যেভাবে জয় তুলে নিয়েছে সেটি কেবল জার্সির ক্ষমতায় নয়, শক্তি দেখিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেই আদায় করতে হয়েছে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের নেতৃত্বে তীব্র গরম ভেদ করে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটিতে আবাহনী শেষ ওভারের শেষ বলে যে জয় তুলে নিল, সেটি যেন ফাইনাল ম্যাচেরই রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে।
সকাল ৯টায় প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৬৭ রান করে শেখ জামাল। এই ম্যাচে এত রান তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সাকিব-জিয়াউর রহমানরা। ১৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোর পরে শেখ জামালের হাল ধরেছিলেন সৈকত আলি ও সাকিব। দুজনের ৭২ রানের জুটিটে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে দলটি। ৪৪ রান করে সৈকত ও ৪৯ করে সাকিব ফিরলে আবারও থমকে যায় শেখ জামাল।
সে সময়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেন নুরুল হাসান সোহান। দলীয় অধিনায়ক সোহান ৪১ রান করে আউট হলে শেষদিকে ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করেন জিয়াউর। ৫৮ বলে ৬টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৩৭ বছর বয়সি এই ক্রিকেটার করেন ৮৫ রান। তাতে রান গিয়ে দাঁড়ায় ২৬৭-তে। অথচ জিয়াউর ঝড়ের আগে মনে হয়েছিল, এই রান ২০০ পার করবে না।
২৬৮ রানের জবাবে আবাহনীর দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও সাব্বির হোসেন ফেরেন ৬০ রানের মধ্যে। যেখানে সাব্বির মাত্র ৬ রান করেই বিদায় নেন। তবে এরপরে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বিজয় ও আফিফ। তাদের ১০৩ রানের জুটিটে আবাহনী হেঁটে চলে জয়ের দিকে। তবে বলে বলে রান দরকার পড়ায় কিছুটা চাপেও থাকে দলটি। চাপ থাকলেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে রেখে এগিয়ে চলেন সুজনের শিষ্যরা। শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক সৈকত। এই জয়ের পেছনে বিজয়ের ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান, আফিফের ৮৩, নাহিদুল ইসলামের ২৪। শেষ দিকে তানজিম সাকিব ও রাকিবুল হাসান দুটি বাউন্ডারি মেরে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান। বাকি কাজটুকু সারেন অধিনায়ক সৈকত।
ম্যাচশেষে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেছেন, ‘দারুণ, আসলে গর্বের মতো একটা বিষয়। আমি জানতাম ২৬০-২৭০ রান মোকাবিলা করা সহজ হবে। কিন্তু শেষের দিকে বল ঠিকমতো ব্যাটে আসছিল না, তাতে রান তোলা একটু কঠিন হয়ে যায়। তবে ব্যাটারদের যেভাবে ব্যাট করা দরকার ছিল, তারা সেভাবে এগিয়ে গেছে একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। শেষে রাকিবুল ও সাকিবের একটি করে বাউন্ডারি আমাদের দলের জন্য খুবই জরুরি ছিল। এগুলোর জন্যই আমরা ম্যাচ জিতি। আমরা মাত্র পাঁচ জন ব্যাটার নিয়ে খেলছিলাম। সুতরাং সকলেই জানতেন আমাদের দায়িত্ব কতটুকু। আমি এই জয়ের কৃতিত্ব তাদেরকে দিব। বিজয় ও আফিফকে ধন্যবাদ দেই। আমরা শেষ দুই ম্যাচ জয় দিয়েই শেষ করতে চাই।’ এ দিকে গাজী গ্রুপকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমদের প্রাইম ব্যাংক ও অপর ম্যাচে শাইনপুকুরের বিপক্ষে ৮ রানের জয় পেয়েছে মোহামেডান। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আবাহনীর ম্যাচই ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রে।
সূত্র: ইত্তেফাক