চলতি বছর ডেঙ্গু চোখ রাঙাচ্ছে আবার। গত বছরের তুলনায় এ বছর আরো ভয়াবহ হতে পারে পরিস্থিতি। ডেঙ্গুর সংকট মোকাবিলায় সংগত কারণেই সতর্কতা জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী জানান, মাত্র তিন দিনেই এই আতঙ্ক কাটানো সম্ভব। প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণের যূথবদ্ধ প্রচেষ্টাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়েই রইলো তার পরামর্শ:
প্রথম পদক্ষেপ পরিবারে
প্রথম পদক্ষেপ পরিবার থেকেই নিতে হবে। এলাকাভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জরুরি। ডেঙ্গু ছড়ায় মশার কামড়ে। মশা বংশবিস্তার করে আবদ্ধ পানিতে। তাই ঘরের ভেতরে, বারান্দায়, ছাদে, এমনকি ভবনের আশপাশের কোনো জায়গায় পানি জমে থাকতে দেবেন না। এই মৌসুমের জ্বরকে অবহেলা করা যাবে না; বরং ডেঙ্গুজ্বরের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। হাসপাতালে সচরাচর ৯০-৯৭ শতাংশ ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণধারীরা হাসপাতালে না এসে সেলফ মেডিকেশন নেন। মাত্র ৩ শতাংশ রোগী বড় লক্ষণ নিয়ে আসেন। তাই কোনো লক্ষণ পেলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে হবে সময়মতো। চিকিত্সা ও সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তিও থাকতে হতে পারে।
মশা দূর করতে
দিনে বা রাতে যখনই শোবেন, মশারি ব্যবহার করুন। মশারি ভালোভাবে গুঁজে দিতেও ভুলবেন না। মশারিতে কোনো বড় ছিদ্র আছে কি-না, খেয়াল রাখুন। মশারির বাইরে থাকার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যাতে হাত-পা ও শরীর ভালোভাবে ঢেকে থাকে। পোশাকে মশানিরোধী পদার্থ (মসকিউটো রিপেলান্ট) ব্যবহার করতে পারেন। তবে তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য রিপেলান্ট না। ঘরের জানালা, বাথরুমের জানালা ও বারান্দার দরজায় ছোট ছিদ্রের নেট লাগিয়ে নিতে পারেন। মশা তাড়াতে ধূপ ব্যবহার করুন, কীটনাশক বা কয়েল ব্যবহার না করে। বাইরে যখন মশার ওষুধ দেওয়া হয়, তখন নিজের বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন।
বাড়িতে জলজ উদ্ভিদ ও অ্যাকুরিয়াম
বাড়িতে জলজ উদ্ভিদ থাকলেও প্রতি ৭২ ঘণ্টায় পাত্রের পানি বদলে ফেলতে পারলে সমস্যা নেই। জলজ উদ্ভিদের জন্য ব্যবহূত জায়গাটি যথেষ্ট বড় হলে গাপ্পি কিংবা গাম্বুসিয়া মাছও ছেড়ে দিতে পারেন। এসব মাছ মশার লার্ভা খেয়ে ফেলে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে তাকান
মাত্র তিন দিনেই মশার সমস্যা দূর করা যায়। মশা জন্মায় এমন টব বা পাত্র যাতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এমনকি বাড়িতে প্লাস্টিক কোনো কাপ বা ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকে পানি জমে থাকলে বিপদ হতে পারে। অব্যবহৃত কমোড ঢেকে রাখুন। ফ্লাশ করুন সময়ে সময়ে। নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমা থাকছে কি-না, খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে এলাকার সবাই মিলে ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বা জমির মালিক ও নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলুন। এ ছাড়া এলাকার কোথাও পানি জমে থাকার আশঙ্কা থাকলে সেই জায়গা নিজেরাই পরিষ্কার করে ফেলুন। প্রয়োজনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সহায়তা নিন।
সূত্র: ইত্তেফাক