কত আশাই না ছিল করণ জোহরের। ‘কলঙ্ক’ কলঙ্কিত হওয়ার পর আশা ছিল ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার টু’ দিয়ে ফিরবেন। কিন্তু তা-ও গুড়েবালি। এই ছবির পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী সবাই নাকি ‘গড়ে ফেল’ করেছেন। বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালে বলিউডের সবচেয়ে বড় হতাশার নাম ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার টু’। কত বড় হতাশা? মুক্তির পর প্রথম তিন দিনে ৮০ কোটি রুপি খরচ করে তৈরি এই ছবি এখন পর্যন্ত তুলে আনতে পেরেছে মাত্র ২৬ কোটি রুপি। এই ছবির রেটিং এসেছে ১.৫।
‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার টু’ ছবির কেন এই অভাবনীয় ধস? প্রথম কারণ, এই ছবির কোনো গল্প নেই। ভারতের বিনোদন সাংবাদিক রাজীব মাসান্দ, অনুপমা চোপড়াসহ সবাই বলেছেন, এই সিনেমার গল্পের মাথামুণ্ডু কিছুই নেই। করণের সিনেমায় যদি অন্য কিছু না-ও থাকে, মেলোড্রামার কোনো অভাব পড়ে না। কিন্তু এই ছবিতে সেটিও নেই। অনুপমা চোপড়া তো বলেই ফেলেছেন, এই ছবির মধ্যবিরতির পরের কাহিনি যদি আগে দেখানো হতো আর আগের অংশ পরে, তাহলেও সিনেমার কাহিনির বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটত না!
কিছু কিছু দৃশ্য তো একেবারে অবাস্তব। যখন ভিলেন আদিত্য শিল টাইগার শ্রফকে মারতে মারতে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে থেকে কলেজ গেট পার করেছে, তখন কলেজের বাকি শিক্ষার্থীরা দুই পাশে জড়ো হয়ে সার্কাস দেখার মতো দেখেছে। ‘লাগে রহো মুন্নাভাই’ সিনেমায় যেমন বিদ্যা বালান রেডিওতে ‘গুড মর্নিং মুম্বাই’ বলেন, ঠিক একইভাবে এই কলেজের প্রিন্সিপালও প্রতিদিন সকালে ‘গুড মর্নিং স্টুডেন্টস’ বলেন। এই সেন্ট তেরেসা কলেজের বৈশিষ্ট্য জানলে আপনিও ভর্তি হতে চাইবেন। কারণ প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই ছবিতে কোনো ছাত্র বা ছাত্রীকে বই খুলতে দেখা যায়নি। এই কলেজের ছেলেরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা করে আর মেয়েরা মাঝে মাঝে নাচে। এটুকুই।
ও হ্যাঁ, এই কলেজের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে শুধু ধনী আর ক্ষমতাবানদের সন্তানেরাই পড়ে। কিন্তু ‘সুপার ট্যালেন্টেড’ হওয়ার কারণে গরিব টাইগার শ্রফ সেখানে পড়ার সুযোগ পায়। আর অবধারিতভাবে এই গরিব টাইগার শ্রফের প্রেমে পড়ে ধনী বাবার মেয়ে তারা সুতারিয়া এবং অনন্যা পাণ্ডে। প্রত্যেকেই টাইগার শ্রফকে নিজের দিকে টানতে নিজের মতো করে ‘ক্যারিশমা’ চালায়। এর মধ্যে তাঁরা সুতারিয়া আবার খানিকটা এগিয়ে। কারণ স্কুলের দিনগুলো থেকেই তারা আর টাইগারের প্রেম।
এই ছবিতে অতিথি চরিত্রে নাকি তিনজনকে দেখা গেছে। দুজনের কথা তো আপনি জানেন, উইল স্মিথ আর আলিয়া ভাট। তৃতীয় জন নাকি ‘কমন সেন্স’। এই ছবিতে কমন সেন্সের তীব্র অভাব অনুভব করেছেন দর্শক সমালোচকেরা। এই ছবির একমাত্র ভালো দিক নাকি ‘অ্যায় জওয়ানি, হ্যায় দিওয়ানি’ গানের রিমেক।
টাইগার শ্রফকে তাঁর আগের সব সিনেমায় যেভাবে দেখা গেছে, এখানেও তার ব্যতিক্রম কিছু দেখা যায়নি। যতটুকু না হাঁটতে দেখা গেছে, তার চেয়ে বেশি দেখা গেছে শূন্যে বা লাফাতে, দৌড়াতে বা নাচতে। বাংলা সিনেমার নিয়ম মেনে এখানেও নায়ক টাইগার শ্রফের একটা প্রতিদ্বন্দ্বী ভিলেন থাকে। আর সূত্র অনুসারে সে অবশ্যই কলেজের ট্রাস্টির ছেলে। তাই দৌড়ের আগে এই ক্ষমতাবান বাবার ছেলে টাইগার শ্রফের কম দামি জুতা দেখে তাচ্ছিল্য করে।
চিত্রনাট্য খুবই বাজে। কোনো চরিত্রকেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি। গল্পের কোনো গভীরতা নেই। সংলাপও যা ইচ্ছা তাই। সেন্স অব হিউমারের নামে যা দেওয়া হয়েছে, তা দর্শককে আরও বিরক্তি উপহার দিয়েছে। দুই নতুন মুখ দর্শকদের উপহার দিয়েছে এক বস্তা হতাশা। কে বেশি ভালো অভিনয় করেছে, এই প্রশ্ন তাই এখানে অবান্তর। তারা সুতারিয়া আর অনন্যা পাণ্ডের ক্ষেত্রে জানতে চাওয়া হচ্ছে, কে বেশি খারাপ অভিনয় করেছে? তার উত্তরেও সমালোচকেরা বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন! একমত হতে পারছেন না তাঁরা। কেউ বলছেন তারা সুতারিয়া আবার কেউ বলছেন অনন্যা পাণ্ডে। তাঁদের দুজনের কারও ভেতরেই সুখ বা দুঃখের কোনো অনুভূতি খুঁজে পাননি দর্শক বা সমালোচকেরা। করণ জোহরকে ‘স্বজনপ্রীতির গডফাদার’ বিভাগে ফিল্মফেয়ার দেওয়ার প্রস্তাবও করেছেন অনেকে।
টাইগার শ্রফ, অনন্য পাণ্ডে আর তারা সুতারিয়া কলেজের প্রধান তিন শিক্ষার্থী। তবে চলচ্চিত্র সমালোচকেরা ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার টু’র সেরা শিক্ষার্থীর পুরস্কার দিতে চান আদিত্য শিলকে। তাঁকেই কেবল মানব সিংয়ের চরিত্রে যথাযথ লেগেছে। টাইগার তাঁর চরিত্রে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁর চরিত্রে দর্শক নতুন তেমন কিছুই পায়নি, যা আগে দেখেনি। তাই হিন্দি সিনেমার ভক্ত যদি টিকিট কেটে হলে যায়, তাহলে সে ড্রামার চেয়ে ট্রমা বেশি অনুভব করবে। রাজীব মাসান্দ অবশ্য বলেছেন, ‘একেবারে দেখা যায় না এমন না, তবে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক আর অপ্রয়োজনীয়।’
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে কোনো সিনেমা খুব খারাপভাবে ফ্লপ করলে সেটাকে ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার টু’র সঙ্গে তুলনা করা হবে। পর পর দুটি বড় বাজেটের মসলাদার তারকাবহুল ছবির অকল্পনীয় ভরাডুবি। করণ জোহরকে মনে হচ্ছে এবার নতুন কিছু নতুনভাবে ভাববার সময় এসে গেছে।