নায়ক ফারুকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার শোবিজপাড়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক যেন হয়ে ওঠে শোকবই। শোবিজ তারকাদের অনেকেই ফেসবুকে লেখেন শোকবার্তা।
চিত্রনায়ক ওমর সানী লিখেছেন, ‘আল্লাহ আমাদের লিজেন্ড ফারুক ভাইকে জান্নাত নসিব করুন। আমিন।’
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লেখেন, ‘বিদায় নায়ক ফারুক। বিনম্র শ্রদ্ধা। আপনার আত্মার শান্তি হোক।’
শাহনাজ খুশি লেখেন, ‘শোক এবং শ্রদ্ধা। না ফেরার দেশে, সবার নায়ক ফারুক।’
অভিনেত্রী তারিন জাহান লেখেন, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আজ ঘণ্টা দুয়েক আগে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাইখ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ভাই।’
অভিনেতা মিশা সওদাগরের শোকবার্তা ছিল এমন— ‘বিদায় মিয়াভাই’। আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা-১৭ (গুলশান – বনানী) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ভাই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।’
নিজের স্ট্যাটাসে চিত্রনায়ক ফারুকের সঙ্গে নিজের একটি ছবিও দিয়েছেন মিশা।
বিজরী বরকতুল্লাহ লেখেন, ‘কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়ক ফারুক সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আল্লাহ তার সকল গুনাহ মাফ করে জান্নাত দান করুন, আমিন।’
চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল লিখেছেন, ‘প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রাখা ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (আমাদের ফারুক ভাই)। এই র্কীতিমান মহান মানুষটির প্রয়াণে গভীর শোক ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নীর স্ট্যাটাস— ‘চিত্রনায়ক ফারুক চলে গেলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এ যেন একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। জানি না কেন এত কষ্ট হচ্ছে একজন নায়কের জন্য। একেই বলে নায়ক, যার প্রস্থানে ভক্তদের চোখ ভেসে যায়।’
চিত্রনায়িকা জাহারা মিতু লিখেছেন, ‘বিটিভিতে আপনার ছবি দেখে বড় হয়েছি। গ্রাম্য ছেলের ভূমিকায় কি অনবদ্য আপনি। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুক (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।’
চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজু লিখেছেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাইখ্যাত, তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ফারুক ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। মৃত্যু অনিবার্য, তবু মৃত্যু আমার ভালো লাগে না। এই সংবাদটি শুনলেই মন বিবশ হয়ে যায়। যে মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন, হাজার চেষ্টা করলেও তার সঙ্গে আর কোনো দিন কথা বলা যাবে না। পৃথিবীর কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমেও আর জানা যাবে না— মানুষটি কেমন আছেন! কী ভীষণ অসহায় আমরা মৃত্যুর কাছে।’
এই নির্মাতার প্রথম দুটি সিনেমাতেই অভিনয় করেছিলেন ফারুক। নিজের চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের একটি ছবি দিয়ে সেই স্মৃতি মনে করে রাজু লিখেছেন, “আমার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘জীবন সংসার’ দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘এ জীবন তোমার আমার’ এর নায়ক ফারুক ভাই। শত শত মধুর স্মৃতি তার সঙ্গে। যেসব স্মৃতি সিনেমার গল্পের চেয়েও মধুর। কোনো একদিন সেই সব স্মৃতি নিয়ে বিষদভাবে লিখব। আজ শুধু বলব, পরপারে ভালো থাকবেন ফারুক ভাই। আল্লাহ যেন আপনার দোষত্রুটি ক্ষমা করে আপনাকে জান্নাতবাসী করেন। আপনার পরিবারের সবাইকে শোক সইবার শক্তি দেন। আমীন।’
চিত্রনায়ক জায়েদ খান ফারুকের সঙ্গে নিজের একটি ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘এতক্ষণ কিছু লিখিনি। কারণ মনে হয়েছে আপনি বেঁচে আছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। এটা তো কথা ছিল না। বলেছিলেন- জায়েদ আসতেছি, আড্ডা হবে। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি নেই।’
১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট পুরান ঢাকায় তার জন্ম। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু, বাবার নাম আজগার হোসেন পাঠান। পাঠান পরিবারের এই সন্তানের বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। ছাত্র বয়সেই জড়িয়ে পড়া ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। দেশ বাঁচাতে মুক্তিযুদ্ধে ধরছিলেন অস্ত্রও।
তবে মুক্তিযুদ্ধের আগেই সিনেমায় নাম লিখিয়েছিলেন এই নায়ক, ‘জলছবি’ নামের সেই সিনেমা মুক্তি পায় একাত্তরে। কিংবদন্তি এ অভিনেতা প্রায় পাঁচ দশক ধরে বড়পর্দা মাতিয়েছেন।