দর্শনায় কেরু চিনিকল ১২ দিন বন্ধ রেখে আধুনিকায়ন প্রযুক্তিতে আঁখ মাড়াই শুরু করার কথা থাকলেও শেষ পযর্ন্ত পূর্বের অবস্থায় ফিরে গিয়ে আঁখ মাড়াই শুরু করলেন মিল কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সড়ে ১০টায় মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ রেখে নতুন বয়লিং হাউজ চালুর করার সিধান্ত নেয় প্রকল্পের (পিডি) প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ফিদা হাসান বাদশা। তবে শেষ পযর্ন্ত পুরাতন বয়লিং হাউজ দিয়ে মিলটি চালু করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেড। কেরু চিনিকল চলতি ইক্ষু মাড়াই মৌসুম কার্যক্রম যাত্রা শুরু গত ২০ ডিসেম্বর গত শুক্রবার বিকাল ৩ টায়। টানা ৫২ দিন মাঁড়াই কার্যক্রম চলার পর হঠাৎ করে নতুন বয়লিং হাউজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেই বিএম আর আই প্রকল্প। সে কারনে কেরুজ কর্তৃপক্ষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সড়ে ১০টায় মাঁড়াই কার্যক্রম বন্ধ রেখে নতুন বয়লিং হাউজ চালুর করার সিধান্ত নেয় প্রকল্পের (পিডি) প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ফিদা হাসান বাদশা।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন বয়লিং হাউজে গরম হয়ে আগুন ধরে যায়। সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভীসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তার আগেই নতুন বয়লিং হাউজের কিছু হাউজিং পাইপ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় অনেক টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়। ক্ষয়ক্ষতির কথা জানতে চাইলে প্রকল্পের (পিডি) প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ফিদা হাসান বাদশা বলেন আমি কিছুই বলতে পারবো না। ২০১২ সালের সেনা বাহীনীর নিয়ন্ত্রিত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ মেশিনটুলস ফ্যাক্টরি লিঃ সরকারী অর্থায়নে বি এম আর অব কেরু এ্যান্ড কোং বিডি লিঃ ১ম সংশোধিত প্রকল্প কাজ শুরু করে। দীর্ঘ ১৩ বছরেও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১শ ২০ কোটি টাকা অনুমোদন হলেও পরে তা বাড়িয়ে ২শ কোটি টাকারও বেশি বাড়িয়ে নেয়।
দীর্ঘ ১৩ বছর পর গতকাল মঙ্গলবার নতুন বয়লিং হাউজ চালু হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত চালু হলো না। এ বছরে চালু হবে কিনা তা কেউ বলতে পারছে না। তাহলে কার ভরসায় ১২ দিন মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হলো। এ ক্ষতির দায়ভার কে নিবে। চিনিকলটি ১২ দিন বন্ধ থাকায় আঁখ চাষীরা আখ রোপন থেকে পিছু হাটছে। কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর ডিজিএম সম্প্রসারণ মাহাবুবুর রহমান গত ২২ ফেব্রয়ারী ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে জানান দেন, অর্ধেক জমিতে আখ দাঁড়িয়ে আছে বাকি অর্ধেক মুড়ি আখ রয়েছে।
জীবননগর সাবজনের বিশিষ্ট আখ চাষী ছাইদার হোসেন বলেন, আমার আখ এখনও সমুদয় আখ এখনও সরবারাহ করতে পারেনী। যার কারনে তিনি ক্ষোভে হতাশা বিরাজ করে ০.৫০ একর মুড়ি আখ চষে ফেলছিলো। এমন হাজারো চাষীরা এবার আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাহলে চাষীরা যদি আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে এ দায়ভার কে নিবে। এ চিনিকলটি ১২ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় পুনরায় পুরাতন মিল দিয়ে আঁখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু করে। আসলে চিনিকলটি এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আঁখের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে বলে ধারনা করছে আখ চাষীরা।
২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মৌসুমের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে কেরু এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের। ৬৫ কার্য দিবসে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিনি আহরণের হার ধরা হয় ৫ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৫২ দিনে এ যাবত ৬০ হাজার ৪৩৮ পয়েন্ট ৮৩৫ মেট্রিক টন আঁখ মাড়াই করে ৩ হাজার ১২৮শত ৫ পয়েন্ট ১৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২০/০২/২০২৫ তারিখ দর্শনা কেরু চিনিকলটি চালু হওয়ার পর মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার মিলটি চালু হওয়া পযর্ন্ত কেরু বাণিজ্যিক খামারে এবং কৃষকের জমিতে ৭/৮ শত একর দন্ডায়মান আঁখ রয়েছে বলে জানান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান।
তিনি আরো বলেন, চলতি আঁখ রোপন মৌসুমে ৬ হাজার একর জমিতে আঁখ রোপন করা জন্য সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছ্। এ পযর্ন্ত ৫ হাজার একর জমিতে আঁখ রোপন হয়েছে। আরো এক হাজার একর জমিতে আঁখ রোপন করা হবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে মিল কর্তৃপক্ষ সার বিতরণের উপর নিরভর করে লক্ষ্যমাত্রা করেন। বাস্তবে কতটুকু আঁখ রোপন হয়েছে তা বলা অসম্ভব। কারণ চাষীরা আঁখ লাগানোর জন্য যে পরিমান জমির কথা বলে সার উত্তোলন করে, তা সঠিক হয় না, কারণ কেরু মিল থেকে সার উত্তোলন করে জমিতে ভুট্টা ও ধান রোপন করে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মিল এলাকায় আঁখ রোপনের লক্ষমাত্রা অর্জন হয় না।