দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানী। এ প্রতিষ্ঠানটি ৪ টি কমপ্লেক্স মিলে এ প্রতিষ্ঠানটি গঠিত।
এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী লোকবল সংকট থাকায় দীর্ঘ ১ যুগ পর ৫ টি চিনিকল মৌসুমী থেকে স্থায়ী করনের সুযোগ পায়। গত ১৪ মার্চ নীতিমালা তৈরি করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের সদর দপ্তরে পাঠায়। তারপর সদর দপ্তর ২৫ মার্চ শৃন্যপদ পৃরন করার জন্য দরখাস্ত করার আহব্বান জানান।
পরে কেরু এ্যান্ড কোম্পানি ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন ৫ সদস্য কমিটি গঠন করে ২ এপ্রিল স্থায়ী করন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।২৪ এপ্রিল সদর দপ্তরের প্রতিনিধি সাইফুল আলম যাচাই বাচাই করেন।পরে ১৩ ও ১৪ নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্টিত হয়।নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ নেয় প্রায় ১৪০ জন শ্রমিক কর্মচারী। ।
গত ১৫ মে সকাল ১১ টার দিকে ১০৯ জনের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকলেও ৫ টি পদে কোন লোকবল না থাকায় ৫ টি পদ শৃন্য রেখে ১০৪ জন শ্রমিককে স্থায়ী নিয়োগ প্রদান করেন।হঠাৎ করে ১৫ মে সন্ধা ৬ টার দিকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন বিএসএফআইসি’র অধীনে সকল চিনিকল প্রতিষ্ঠানে চলমান মৌসুমি জনবল থেকে স্থায়ী সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করার আদেশ দেন সচিব বিএসএফআইসি চৌধুরী রুহুল আমিন কায়ছার। তার আগে শ্রমিক কর্মচারীরা যোগদানের চিঠি হাতে পেয়ে স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদান করে। যোগদানের পরে ১০৪ শ্রমিকদের মাঝে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে।ঐদিনই বাংলাদেশ চিনি খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন নিয়োগ স্থগিতের চিঠি আসাতে অন্যআন্য মিলের শ্রমিকরা হতাশা বিরাজ করলেও কেরুর শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে দেখা গেছে আনন্দ উল্লাস করতে। শ্রমিকরা বলেন দীর্ঘ ১ যুগ পর ১০৪জন মৌসুমী শ্রমিক ও কর্মচারীরা দীর্ঘ ১৫/২০ বছর পর সিজেনাল মৌসুমি থেকে স্থায়ী নিয়োগ পেয়েছে গত ১৫ মে রবিবার সকাল ১১ টার দিকে। তাদেরকে নিয়োগ প্রদান করে কেরু এ্যান্ড কোম্পানির বিভিন্ন দপ্তরে যোগদান করে।
দীর্ঘদিন ধরে গ্রান্ড কোম্পানির শ্রমিক কর্মচারীরা ইতিপূর্ব ৩ বার নিয়োগ পরীক্ষা ব্যাহত হয়েছে । এবার চাকরিতে যোগদান করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে শ্রমিক ও কর্মচারীরা। তারা দীর্ঘদিন ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে ছিলো। কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর গ্যারেজ সুপারফাইজার মিজানুর রহমান কান্না জড়িত কন্ঠে গণ মাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমি ২০০১ সাল থেকে সিজেনাল মৌসুমি চাকুরী করে আসছি, দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম সংসার চালিয়ে এসেছি। শেষ সময়ে পদোন্নতি পেলাম,আমার আর সাড়ে ৭ মাস চাকুরী আছে।আমার পদোন্নতি পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি এবং কেরু কতৃপক্ষ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
আউট ষ্টেশন ক্যান গার্ড আবুল কাশেম,চাকুরীর শেষ সময়ে স্থায়ী হলাম সাড়ে তিন বছর চাকুরি আছে তাতেও আমিও খুশি।
আউট ষ্টেশন ক্যান গার্ড শহিদুল ইসলাম
এল ডি সেটিংস ২৬ বছর পর, পদোন্নতি পেলেন, আতিয়ার রহমান, ১৪ বছর পর পদন্নোতি পেলাম।
মৌসুমি ক্রয় করনিক, শান্তি মিয়া, ১৪ বছর পর স্থায়ী পদোন্নতি পায়। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মতিয়ার রহমান, ড্রাইভার, দীর্ঘ ১৪ বছর পর স্হায়ী হয়। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, জাহাঙ্গীর, বদরুল, নৃরুল আমিন, রাজু আহম্মে মতিয়ার রহমান, জুবাইদা নাহার এ্যানি ও নাজেরা বেগমসহ ১৫/২০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে স্থায়ী করন করে।
তারা আরও বলেন, আমাদের অনেক দিনের কষ্টের ফসল,খেয়ে না খেয়ে ডিউটি করছি এখন আমাদের স্থায়ী হওয়াতে আমার সব কষ্ট দৃর হয়ে গেছে।
এ প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে প্রায় ১৪ শ শ্রমিক-কর্মচারী। এ সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারী সহ এলাকার প্রায় ২০ হাজার পরিবারে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি। আইনি জটিলতার কারনে দীর্ঘদিন স্থায়ী নিয়োগ না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানির বিভিন্ন বিভাগে প্রায় দেড় শতাধীক শুণ্য পদ তৈরী হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বিঘ্নিতসহ শ্রমিক-কর্চারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় হতাশা।
প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক দিক বিবেচনা করে সকল আইনি জটিলতা কাটিয়ে চুয়াডাঙ্গা-২আসন সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের সহ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের একান্ত প্রচেস্টায় ১০৪ জন শ্রমিক-কর্মচারীর স্থায়ীকরণ করে। এসমস্ত মৌসুমী শ্রমিক-কর্মচারীদের ভাগ্য পরিবর্তন হওয়ায় তাদের পরিবারের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ।
কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, নিয়ম মাফিক প্রতিষ্ঠানে ১০৯ টি শুন্য পদের জন্য গত ১৩ ও ১৪ মে সকালে কেরু হাইস্কুলে শ্রমিক-কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়োগ পরিক্ষায় প্রায় ২শ শ্রমিক কর্মচারী অংশ নেয়। পরে ওই দিনই যাচায়-বাচাঁয় করে চুড়ান্ত ভাবে ১ ০৯জনের স্থাায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। সংশিষ্ট পদে লোক না থাকায় ৫ টি পদ বাকি রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ১০৪ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করণ করা হয়। গত ১৫ মে সকালে সদ্য স্থায়ী করণ শ্রমিক-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে। পরে সন্ধায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন সচিব নিয়োগ স্থগিতে আদেশ দেন,তার আগেই শ্রমিক কর্মচারীরা যোগদান করে।
এ বিষয়ে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ বলেন,আমরা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অনুমোদনে আমরা এ স্থায়ী নিয়োগ সম্পর্ন করেছি।
এ বিষয়ে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন,২০/২৫ বছর ধরে শ্রমিকরা চাকুরী করে যাচ্ছে তাদেন কোন পদোন্নতি হয়না। তাই সবার প্রোচেষ্টায় গত ১৫ মে ১০৪ জন শ্রমিককে স্থায়ী করন করা হয়েছে। স্বচ্ছতা না থাকলে যাদের ৭ মাস, কারও ২ বছর সাড়ে তিন বছর তাদের স্থায়ী হত না। এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তাদের অগ্র অধিকার দিয়ে এ স্থায়ী করনের নিয়োগ সম্পর্ন করা হয়েছে।