দামুড়হুদা উপজেলার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলেন নব যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র। আজ সোমবার বেলা ২টার সময় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে পরিষদের সম্মেলন কক্ষে উপজেলার কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র’র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এইচ তাসফিকুর রহমান, দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুজ্জোহা পলাশ, সাধারণ সম্পাদক তানজির ফয়সাল, সহসভাপতি মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক রকিবুল হাসান তোতা, প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, আরিফুল ইসলাম মিলন। প্রেসক্লাব সদস্য শেখ হাতেম, আনারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম মানিক, বিল্লাল হোসেন। দামুড়হুদা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান কাজল, সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল বাবু, সহসভাপতি মোজাম্মেল শিশির। দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল হক পিপুল, সাবেক সভাপতি আওয়াল হোসেন, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল হক, সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জান ধীরু, সাংবাদিক সমিতির সাধারন সম্পাদক হানিফ মন্ডল, সাবেক সাধারন সম্পাদক আহসান হাবীব মামুন, সহ সম্পাদক মনিরুজ্জান সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসমত আলী প্রমূখ।
মতবিনিময় সভা অত্যন্ত প্রাণবন্ত ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটা সাংবাদিক তাদের মতামত তুলে ধরেন। দামুড়হুদা উপজেলার সম্ভাবনা এবং সমস্যা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, দামুড়হুদা উপজেলা একটি বর্ডার বেল্ট সাইড। পূর্বের মতো এখনো এসব সাইড দিয়ে প্রচুর পরিমাণে মাদকদ্রব্য আসে, এরমধ্যে ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন এবং ব্রুপ্রোফাইন ইনজেকশন অন্যতম। ভারত থেকে যখন গরু আসে বা গরু পার হয়ে বাংলাদেশে আসে তখন ইন্ডিয়ান বিএসএফ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু যখন মাদকদ্রব্য আসে তখন বিএসএফ কিছুই বলে না, বরঞ্চ আরও সাহায্য সহযোগিতা করে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতন হওয়ার পরে এখনো পর্যন্ত বর্তমানে উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে গিয়েছে। কোন স্কুলে কমিটি না থাকার কারণে কেউ কারো কোনো কথা শোনে না, মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাশ হয় না। দামুড়হুদা সদরে সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাসে তিন দিনও ঠিকমতো ক্লাস হয়না, বাজার ঘাট ও স্কুলের বর্তমানে কোন কমিটি নেই, যার ফলে কেউ কোন দায়িত্ব পালন করছেনা।
দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে খুবই হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রচুর পরিমাণে জন্ম নিবন্ধন পেন্ডিং রয়েছে। কারো কারো গত দুই বছরের জন্ম নিবন্ধন পর্যন্ত এখনো ঝুলে আছে, টাকা নিয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। সরকারি নির্ধারিত ফি’র তিনগুণ চার গুণ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। সঠিক সময়ে জন্ম নিবন্ধন না পাওয়ার কারণে এই ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত প্রাইমারি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনি। শুধু তাই নয় জন্ম নিবন্ধনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে হঠকারিতা গ্যাঞ্জাম ফ্যাসাদ লেগেই আছে। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাইরে থেকে চকচকে দেখা গেলেও তার ভেতরের বর্তমান চিত্রপট খুবই শোচনীয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জাত সুইপার না থাকার কারণে বাথরুম গুলোর বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে, সেখানে রোগী এবং জনসাধারণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে টয়লেট ব্যবহার করছে।
অথচ সুইপারের নামে সরকারি টাকা ঠিকই পাচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে সকল খাবার পরিবেশন করা হয় তাও নিম্নমানের ও সঠিক ভাবে রুটিন মনে কাজ হয়না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের ঠিকমত পাওয়া যায় না। বিভিন্ন ট্রেনিং এর নামে তারা বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকে। সন্ধ্যার পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে ওঠে মাদকের অভয়ারণ্য। ফলে যারা সেখানে থাকে তারা রাতে বাইরে বের হতে ভয় পায়। দামুড়হুদা বাস স্ট্যান্ডে সব সময় যানজট লেগেই থাকে, তা নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। শুধু দামুড়হুদা বাসট্যান্ড নয় ডুগডুগি পশুহাট, কার্পাসডাঙ্গা হাটও সাপ্তাহিক হাটের দিন চরম যানজটে পরিণত থাকে, যা স্থায়ীভাবে সমাধান হওয়া প্রয়োজন। দামুড়হুদা উপজেলা একটি কৃষি নির্ভর অঞ্চল। এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়। কিন্তু তা বিক্রির জন্য এই অঞ্চলে কোন স্থায়ী ধানের হাট নেই। ধান বেচা কেনার জন্য সুদূর জীবননগর উপজেলায় নিয়ে যেতে হয়। যা কৃষকের জন্য খুবই কষ্টকর। তাই দামুড়হুদায় একটি ধানের হাট খুবই প্রয়োজন। এছাড়াও এই উপজেলায় কিশোরগ্যাং একটা বড় সমস্যা। শুধু তাই নয় দর্শনায়ই এক মাসের ব্যবধানে চার পাঁচটি স্থান থেকে বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। যাতে করে দর্শনাবাসী খুবই ভয়ে এবং উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।
এছাড়াও এখনো সাংবাদিকদের মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ভাবে করা হয়। ইতিমধ্যে সাংবাদিকের নামে মাদকের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টাকরী ওই পুলিশ অফিসার কে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয়। এসময় উপজেলার সকল বিষয়ে দামুড়হুদা ও দর্শনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা নবাগত ইউএনও তিথি মিত্র’র পাশে থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র বলেন, যে সকল সমস্যার কথা শুনলাম তা নিরসনে সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন। এককভাবে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, তবে সমস্যা নিরসনে আমার শতভাগ চেষ্টা থাকবে। সঠিক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সকলের সহযোগিতায় এই দামুড়হুদা উপজেলা হয়ে উঠবে একটি চমৎকার উপজেলা।