দামুড়হুদা সদরে বেগোপাড়ায় হয়ে গেল গ্রাম বাংলা’র ঐতিহ্যবাহী বিষধর সাপ নিয়ে ঝাঁপান খেলা।
গতকাল বুধবার সারাদিন ভর মেহেরপুর জেলার বলিয়ার পুরের সাপুড়ে দল এবং চুয়াডাঙ্গার তারিনীপুর গ্রামের সাপুড়ে দল।
এই দুই দল সাপুড়ে দলের অর্ধশতাধিক সাপের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে প্রতিটি সাপ প্রদর্শন করে নিজেদের আকর্ষণীয় কলাকৌশলে। আর এ দুর্লভ দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। মানুষকে এ আনন্দ দেওয়াটাই যেন সাপুড়েদের মূল উদ্দেশ্যে।
দুপুরের পর থেকেই ঝাপান খেলা দেখতে দামুড়হুদা বেগো পাড়ায় ভিড় করে শত শত মানুষ। বাদ্যের তালে তালে সাপুড়েকে নিজে নাচতে হয় আর সঙ্গে ফনা তুলে সাপও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। সাপুড়ের ইশারায় সাপের এই অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ। আর তাই এই দুর্লভ দৃশ্য দেখতে দূরদুরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা চামেলী বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, আমি জীবনের প্রথম ঝাপান খেলা এখানে এসে দেখছি। আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি চাইব এ ধরনের আয়োজন যেন প্রতি বছর করা হয়। সাদিয়া আফরিন নামের অপর এক গৃহবধূ বলেন, আমি শহরে থাকি। ঝাপান খেলার কথা শুনে আমার বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। আমিও দেখছি আমার বাচ্চারাও দারুণ উপভোগ করছে। সাপ সম্পর্কে ওদের ধারণা হচ্ছে।
দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে বয়োবৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, শিশুরা উপস্থিত থেকে নিবিড় দৃষ্টিতে সাপের খেলা উপভোগ করেন। এই খেলাকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য যে এত মনোমুগ্ধকর, ঝাপান খেলা না দেখলে বোঝা যাবে না।
দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়নের তারিনী পুর গ্রাম থেকে আসা নজরুল ইসলাম নজু সাপুড়ে বলেন, মূলত আমাদের পেশা এটা না। আমরা মানুষকে আনন্দ দিয়। আর খেলা করে আনন্দ পাই। এ জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ঝাপান খেলা করি।
দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সামসুল আলম বলেন, চিরায়ত বাংলার ঐহিত্যবাহী এ খেলা দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আর এলাকার মানুষকে একটু আনন্দ দিতেই এ আয়োজন।
খেলায় মেহেরপুর বলিয়ার পুর সাপুড়ে দলকে হারিয়ে দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়নের তারিনী পুর গ্রামের নজু সাপুরের দল প্রথম হয়।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিষধর সাপ নিয়ে ঝাপান খেলাটি আয়োজক করেন, দামুড়হুদা সদরের বেগো পাড়ার ভানুমতি।