দামুড়হুদায় গলাকেটে ও কুপিয়ে নৃশংস ভাবে কিতাব উদ্দিন নামের একজন মাদক ব্যাবসায়ীকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার কাদিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে নিহতের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়না তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতের লাশ পাঠানো হয়।
নিহত ব্যক্তি হলেন দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রামের স্কুল পাড়ার মসলেম উদ্দিন এর জামাই (ঘরজামাই) এবং জীবননগর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেন এর ছেলে কিতাব উদ্দিন (৪৫)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সাইফুল ইসলাম।
স্থানীয় ও পারিবারিক সুত্রে জানাগেছে, দামুড়হুদা উপজেলার কাদিপুর গ্রামের স্কুল পাড়ার মসলেম উদ্দিন এর মেয়ে রাবেয়া খাতুন (৩৯) এর সাথে প্রায় ২৪ বছর পূর্বে বিয়ে হয় কিতাব উদ্দিনের, এবং সেই থেকেই তিনি ঘরজামাই থাকতো কাদিপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন মাদক (গাঁজা) ব্যাসার সাথে জড়িত ছিল। সংসারে তার দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। ইতিমধ্যে মেয়ে দুইটার বিয়ে দিয়েছে। বড় মেয়ে মিতা খাতুন (১৮), মেজো মেয়ে অন্তরা খাতুন (১৬) এবং ছোট ছেলের নাম অনিক হোসেন (৯)।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিহত কিতাব উদ্দিন পাখিভ্যান চালিয়ে বাড়ি আসে। রাত ৯টার দিকে একটি ফোন পেয়ে নিজবাড়ি হইতে চা খাওয়ার জন্য দোকানের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপরে কাদিপুর গ্রামের সাহাদত এর চা’য়ের দোকানে তাকে দেখাযায়। তারপর রাতে আর তিনি বাড়ি ফেরত যাইনি। বাড়ির সদস্যরা মনে করেছেন পবিত্র শবেকদরের রাতে হয়তো নামাজ পরছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কাদিপুর গোরস্থান পাড়ার মৃত মেহের আলীর ছেলে জেহের আলী ধান ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য জমিতে যাওয়ার সময় কাদিপুর গ্রামের মৃত সোবাহান মণ্ডল এর ছেলে ইসহাক মন্ডল এর জমির উপর মৃতদেহ দেখতে পায়। প্রথমে তিনি ফায়ার সার্ভিসে সংবাদ দেন, দ্রুত সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সাইফুল ইসলাম ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক ও দামুড়হুদা সার্কেলের এএসপি জাকিয়া সুলতানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জেলা গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব সিআইডি ও পিবিআই এর টিম ঘটনা স্থলে এসে পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেন নিহত এবং তার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে মাদক (গাঁজা) ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। নিহত এবং তার স্ত্রীর নামে মাদক মামলা রয়েছে। ঘটনা স্থলের পাশে মাদক (গাঁজা) সেবনের সরঞ্জামাদি রয়েছে। নিহতের গলায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করে ক্ষত বিক্ষত করা হয়েছে। হয়তো গাঁজার সাথে জড়িত বা মাদকের কোন লেনদেন ছিল এমন কেউ তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করতে পারে। তবে দেখে মনে হচ্ছে এটা এক জনের কাজনা। এর সাথে কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে বলে স্থানীয় গ্রামবাসীর ধারণা।
নিহতের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বলেন আমাদের প্রায় ২৪ বছর পূর্বে বিয়ে হয়েছে। সেই থেকেই তিনি ঘরজামাই হিসাবে এখানে কাদিপুরে থাকে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সে পাখিভ্যান চালিয়ে বাড়ি আসে। বাড়ি আসার কিছুক্ষণ পরে তার মোবাইলে একটা ফোন আসে। তখন সে বলে আমি একটু চা খেয়ে আসছি। এই বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সারারাত আর বাড়ি ফেরেনি। আমি ভেবেছিলাম পবিত্র শবে কদরের রাতে হয়তো নামাজ পড়ছে। সকালে জানতে পারলাম তাকে খুন করা হয়েছে। কারো সাথে কোন শত্রুতা ছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন তেমন কারো সাথে কোন শত্রুতা ছিল না।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, মাদক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে হত্যাকান্ড হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত কিতাব আলীর নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আবু তারেক বলেন, এটা একটা হত্যাকান্ড। পরিকল্পিত ভাবে নিহতকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত চলছে, নিহতের লাশ পোস্ট মর্টামের জন্য পাঠানো হয়েছে।