মেহেরপুর জেলা পরিষদের গাছ বিক্রয়ের দরপত্র জমা দিতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সিডিউল ক্রেতারা। এ কাজে জেলা পরিষদের নবাগত চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালামের কারসাজি বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদ চেয়াম্যানের দাবী করেছেন তিনি নতুন লোক। তার গায়ে কাদা লাগানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় আব্দুল লতিফ নামের এক সিডিউল ক্রেতা মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাব, মেহেরপুর প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, মুজিবনগর-দর্শনা সড়কের ১৩৯টি ও মুজিবনগর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একটি মেহগনীসহ মোট ১৪০টি গাছের বিক্রয়ের দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিলো গতকাল ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত। জেলা পরিষদ কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দরপত্র বাক্স রাখার কথা। জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বক্স থাকলেও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এ দরপত্র জমা দেওয়ার কোন বক্স ছিলো না বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ওই একই সময়ে বিআরডিবির আরেকটি টেণ্ডার জমা কাজ থাকায় সেখানে নতুন কোন বক্স ছিলো না। তবে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বক্স স্থাপন ও কোন দরপত্র জমা পড়েনি বলে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। আর এ কাজটি পাওয়ার জন্য ২৯ জনের নামে ১৮ টি সিডিউল বিক্রি হয়। কিন্তু ১৮টির মধ্যে মাত্র ২টি সিডিউল জমা পড়ে।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, জানা গেছে, কিন্তু আব্দুল লতিফ নামের এক সিডিউল ক্রেতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দরপত্র জমা দিতে গেলে জেলা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট যান এবং সেখানে টেণ্ডার জমা দিন। তিনি সে মোতাবেক জেলা পরিষদের টেণ্ডার বাক্সে টেণ্ডার জমা দিতে গেলে টেণ্ডার বাক্সের কাছে থাকা স্থানীয় কিছু দুর্ধর্ষ, দাঙ্গাবাজ ব্যক্তি সিডিউল জমা দিতে দেয়নি। একই সঙ্গে গালাগালি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু। এসময় দায়িত্বরত পুলিশকে জানালেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি।
জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মজিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমার পক্ষে আব্দুল লতিফ টেণ্ডার জমা দিতে এসেছিলেন। এ কাজে ৫টি লট মিলে এক কোটি ৯ লাখ টাকা সিডি করেছি। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি বাইরের দুজন সিডিউল জমা দিয়েছেন। কিন্তু সিডিউল জমা দিতে গেলে বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালামের ভাড়াটিয়া দূর্বৃত্ত তৌহিদ, নাসির, আয়ুব, রানাসহ কয়েকজন বাঁধা দেয় এবং ধস্তাধস্তি করে।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম তিনি কোন সমাধান দেননি। যখন শেষ সময় পর্যন্ত জমা দিতে না পেরে ডিডিএলজি মহোদয়ের নিকট অভিযোগ দিতে গেলে তিনি অভিযোগও নেননি।
একই অভিযোগ করেছেন জেলা পরিদের সাবেক সদস্য আলমাস হোসেন শিলুও। তাকেও সিডিউল জমা দিতে হয়নি বলে জানান তিনি।
মেহেরপুর সদর থানা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু অভিযোগ করে মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, কুষ্টিয়া মিরপুরের মালিথা এন্টারপ্রাইজের হয়ে ১২টা ৪০মিনিটে এসপি অফিসে টেণ্ডার ড্রপ করতে যায়। সেখানে কোন বক্স না পেয়ে জেলা প্রশাসককে ফোন দিলে তিনি অভিযোগ দিতে বলেন। সেখানে না পেয়ে আমি আর কোথাও যায়নি। সময়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, এসপি অফিসের সিসি টিভি ফুটেজ দেখলেই বুঝা যাবে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একজন দেরি করে গিয়ে সিডিউল জমা দিতে পারেননি এমন অভিযোগ পেয়েছি। তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা জেলা পরিষদে সিডিউল জমা দিতে পারেননি এমন কোন অভিযোগ পাননি।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের টেণ্ডার বক্স থেকে কোন সিডিউল পাওয়া যায়নি। তবে জেলা পরিষদের টেণ্ডার বক্স থেকে ২ সেট সিডিউল পাওয়া গেছে। আগামী ২ জানুয়ারি মূল্যায়ন কমিটির সভা থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তার আগে কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালাম মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, টেণ্ডার জমা দেওয়া নিয়ে কোন রকম ধস্তাধস্তি বা বাঁধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, নির্ধারিত সময়ের পরে টেণ্ডার ড্রপ করতে গিয়ে তারা জমা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ পেয়েছি। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও এসপি অফিসে ছিলো। কেউ যদি আওয়াজ দেয়, জমা দেব জমা দেব, আমাকে টাকা দেও। কিছু কাগজ নিয়ে যদি বলে আমাকে টাকা দাও, আমি কি কাউকে টাকা দেওয়ার ক্ষমতা রাখি? এসপি অফিসে বক্স ছিলো না উত্তরে তিনি বলেন ছিলো এবং স্বপক্ষে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একটি চিটিও দেখান। তিনি বলেন, আমি নতুন লোক, আমার গায়ে কাঁদা লাগানোর চেষ্টা চলছে।