করোনা মহামারির মধ্যে অনেকে অফিস করছেন বাসা থেকেই। বেশিরভাগ কাজই করতে হচ্ছে মোবাইলে, নইলে কম্পিউটারে।
তবে এখনকার মোবাইলগুলোতে সব আধুনিক ফিচার থাকায় অনেকে মোবাইলেই সেরে নেন কাজ।
এ সময় প্রায় সবারই মোবাইল ব্যবহার বেড়েছে বেশি। অফিসের কাজ করতে, ক্লাস করতে অথবা অলস সময় পার করতেও এখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়েছে অনেকগুণ।
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে অনেক সময় আঙুল আর কব্জিতে ব্যথা অনুভব হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এতই ব্যথা হতে পারে যে, একটা চামচ ধরতেও কষ্ট হয়।
মোবাইল ব্যবহার থেকে এমন সমস্যা নিয়ে অনেকে চিকিৎসকের দারস্থও হন। এ বিষয়ে ভারতের অস্থি শল্যচিকিৎসক সুদীপ্ত ঘোষ বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে অনেক ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। বহু মানুষ বিভিন্ন ভঙ্গিতে বসে মোবাইল ব্যবহার করেন। ফলে পিঠ-কোমরেও বহু সময়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে হাতের। একনাগারে মোবাইল ব্যবহার করার ফলে পেশিতে টান পড়ে। রক্ত চলাচলের গতিও কমে। ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা বেদনার সূত্রপাত’।
তিনি আরও জানান, মোবাইল ব্যবহারের সময় ঘাড় নিচু করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। টেবিলে চোখের সোজাসুজি রেখে মোবাইল ব্যবহার করলে ভালো হয়।
ব্রিটেনের হ্যান্ড ও এলবো সার্জন চিকিৎসক রজার পাওয়েল তার একটি গবেষণায় বলেন, ‘দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মোবাইলে টেক্সট লিখলে টেক্সট ক্ল এবং সেলফোন এলবো নামে আঙুল ও কব্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় এ সমস্যার নাম কিউবিটাল টানেল সিনড্রোম বলে।
অনবরত টেক্সট লিখলে বুড়ো আঙুল, তর্জনী এবং মধ্যমা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার হয়। ফলে আঙুল দুটির কাছাকাছি থাকা স্নায়ুর ওপরে বাড়তি চাপ পড়ে। এর জেরে প্রথমে আঙুল অসাড় লাগে। পরের দিকে ব্যথা হয়। এর থেকে রেহাই পেতে আঙুল স্ট্রেচ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক।
এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অগ্নিভ মাইতি অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে সমস্যা হিসেবে জানান, ‘একটানা মোবাইলে কথা বলার কারণে ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যথার সঙ্গে মাইগ্রেনের মাথাব্যথার ঝুঁকি বাড়ে। টাচ ফোনে একটানা মেসেজ করার কারণে বেশি বয়সে হাতের কব্জি ও আঙুলে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। দিনরাত মোবাইল সঙ্গে রাখেন এমনকি বাথরুমে ও ঘুমানোর সময়েও মোবাইল সঙ্গে নিয়ে যান তাদের পেশি ও স্নায়ুতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এতে স্ট্রেন ইনজ্যুরির ঝুঁকি বাড়ে। অর্থাৎ যখন-তখন তীব্র ব্যথায় কষ্ট পেতে হতে পারে।
তিনি আরও জানান, এসব সমস্যা প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো মোবাইল ফোন ব্যবহার কমানো।
মোবাইলের ব্যবহার কমানো না গেলেও কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার।
যেমন-
-স্পিকারে কথা বলা
-সব আঙুল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা
-টানা ফোন ব্যবহারের ফাঁকে হাত-আঙুল স্ট্রেচিং করে নেওয়া ইত্যাদি।
এগুলো করলে মোবাইল ব্যবহার করেও নিজেকে অনেকটা সুস্থ রাখা সম্ভব।