প্রযুক্তির অগ্রতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব, সেই সঙ্গে সমানতালে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিনিয়ত মানুষ ইন্টারনেট অনলাইন ও ডিজিটাল মিডিয়ায় অভ্যস্ত হচ্ছে। সর্বক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের ব্যবহার সহজ করে তুলছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। দেশে বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। আর এর মাধ্যমে গ্রাহক হারানোর ধারা থেকে বেরিয়ে এলো মোবাইল ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির প্রকাশিত জুন মাসের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশে আগের চেয়ে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৪৯ লাখ ৫ হাজার। গত মে মাসে যা ছিল ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার। সেই হিসেবে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ৬ লাখ ৬৯ হাজার। মোবাইল অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা হিসাব করে দেখা গেছে, গত তিন মাসে অর্থাৎ মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত মোবাইল অপারেটরগুলো ২ লাখ ৮ হাজার গ্রাহক হারিয়েছে। আবার গত এক মাসে তিনগুণের বেশি গ্রাহক ফিরে পেয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলো। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত এক মাসে (জুন) ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে দুই মাধ্যমেই।
গত মে মাস পর্যন্ত দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ ৮৪ হাজার। বিটিআরসি প্রকাশিত জুন মাসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৫ লাখ ৭১ হাজার। সেই হিসাবে এক মাসে ব্যবহারকারী বেড়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে যা ছিল ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার। ফেব্রুয়ারি-মার্চ-মে, এ তিন মাসে একলাফে ব্রডব্যান্ডের গ্রাহক বেড়ে যায় ২৩ লাখ ৪১ হাজার।
দেশে লকডাউন শুরু হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অনলাইনে স্কুলের ক্লাস শুরু হয়। এছাড়া লকডাউনের সময় বেশিরভাগ লোক ঘরে থাকার ফলে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখার হার বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন সংযোগ নেয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ কারণে দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, দেশে লকডাউনের কারণে মানুষ ঘরে থেকে অনলাইন ক্লাস, ভিডিও কনফারেন্স এমনকি টেলিমেডিসিনসহ সব সেবা ইন্টারনেটের মাধ্যমেই নিচ্ছে, যা মোবাইল ইন্টারনেটে কাভার করতে পারেনি বলেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা যা বেড়েছে এর বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকারের সহযোগিতা পেলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এমনকি ২০২১-২২ সালের মধ্যে দেশের ইন্টারনেট পেনিট্রেশন ৩০ থেকে ৪০ ভাগই ব্রডব্যান্ড কাভার করবে। জনাব হাকিম আরও বলেন, ‘বিটিআরসি ৮৫ লাখ ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রকাশ করলেও আমাদের ধারণা তা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এটি জুন মাসের তথ্য। এরপর আরও দেড় মাস চলে গেছে। প্রকৃত গ্রাহক সংখ্যা আরও বেশি।’
এদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও দেশে কমেছে মোবাইল সংযোগ সংখ্যা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক মাসে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা কমেছে ২ লাখ ১১ হাজার। যেখানে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার, যা ৩১ মে পর্যন্ত ছিল ১৬ কোটি ১৫ লাখ ৬ হাজার। এর আগে মার্চ, এপ্রিল ও মে এ তিন মাসে মোবাইল সংযোগ কমেছিল ৪৬ লাখ ৮ হাজার। সূত্র-যুগান্তর