এম এফ রুপক / ফয়সাল আহম্মেদ
মেহেরপুরে ফসলের উপর শত্রুতা যেন থামছেই না। একের পর এক ফসলের জমি থেকে ফসল কেটে নষ্ট করে দিচ্ছে দূর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবারও ঘটেছে এক চাষির গম ক্ষেত কেটে নষ্ট করার ঘটনা।
এ নিয়ে গত এক মাসে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ডজন খানেক চাষির জমিতে হামলা চালিয়ে উঠতি ফসল কেটে নষ্ট করে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। এছাড়াও পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে লাখ লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। এতে চাষিদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
এ ধরনের অনেক অভিযোগ থাকলেও এখনো অধরা অভিযুক্তরা। কখনো চাদা না পেয়ে আবার কখনো শত্রুতা করে এই ফসল কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছে চাষিরা। এছাড়াও জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেও এ ধরণের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে অনেকেই। মাস খানেকের মধ্যে এতগুলো ফসল কেটে নষ্ট করার ঘটনায় উদ্বিগ্ন এলাকার চাষিরা। দামি ফসল গুলো এইভাবে কেটে নষ্ট করায় অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
গতকাল বুধবার মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের মিনারুল নামের এক গম চাষির এক বিঘা জমির গম কেটে নষ্ট করেছে প্রতিপক্ষরা। এতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার। এ বিষয়ে মিনারুল ইসলাম জানান, জমিতে সেচ দেওয়াকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের লোকমান নামের এক জনের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে লোকমান আমাকে হুমকি দিয়ে বলে “জমির গম কিভাবে তুলবি, দেখে নেবো”। পরে লোকমান, আসমানি ও সাহাদৎ মিলে আমার এক বিঘা জমির গম কেটে নষ্ট করে দিয়েছে। এ বিষয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
গত ১৬ জানুয়ারি মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর গ্রামে চাঁদা না পেয়ে দুই বিঘা জমির পেঁয়াজ কেটে নষ্ট করার ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী চাষি ফয়জদ্দিন আলীর ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। এ বিষয়ে ফয়জদ্দিন জানান, একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে প্রতিনিয়তই চাঁদা চাইতো। আমি চাঁদা দিতে না চাইলে তারা আমার পেঁয়াজ কেটে নষ্ট করে দিয়েছে।
গত ২৫ ডিসেম্বর গাংনী উপজেলার যুগিরগোফা গ্রামে ঘটেছে মাছ মারার ঘটনা। বড় আশা করে অনেক স¦প্ন নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছিল যুগিরগোফা গ্রামের ৬ জন মাছ চাষি। কিন্তু দূর্বৃত্তদের বিষ প্রয়োগের ফলে মাছ গুলো মারা যায়। এতে নিমিষেই স¦প্ন শেষ হয়ে যায় তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত চাষি আব্দুল লতিফ, ঠান্ডু মিয়া, আনিস, ইদ্রিস, খলিল মেম্বর ও দুখু মিয়া জানান, আমাদের প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। রাতের আঁধারে এই ধরণের নেক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বিত্তরা।
একই উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে ঘটেছে তামাক কেটে নষ্ট করার ঘটনা। গত ৭ জানুয়ারি গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মাঠে ২ বিঘা জমির তামাক কেটে নষ্ট করেছে দুর্বিত্তরা। লোন করে তামাক চাষ করে এখন চরম বিপাকে পড়েছে একই গ্রামের ভুক্তভোগী চাষি মুরাদ আলী।
এছাড়াও ঢেপা গ্রামে ঘটেছে উঠতি কলা কাটার ঘটনা। গত ১৫ জানুয়ারী রাতে শত্রুতা করে এমন কাজ করেছে বলে জানায় ভুক্তভোগী চাষি চান মিয়া। চরগোয়াল গ্রামে কলা চাষি হাবিব উদ্দিনের সাথে একই ঘটনা ঘটেছে। এখানে প্রায় ৩শ টি কলার কাঁদিসহ গাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে গাংনী থানার ওসি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিলেও মেলেনি সুফল।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামেও ঘটেছে কলা গাছ কাটার ঘটনা। এখানেও দুই বিঘা জমির কলা কেটে নষ্ট করে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল সদর থানায়। এছাড়াও মেহেরপুর শহরের তাহের ক্লিনিক পাড়ায় ঘটেছে একই ঘটনা। আবু তাহের নামের এক চাষির দুইবিঘা জমির কলা কেটে নষ্ট করেছে দূর্বৃত্তরা। এতে প্রায় দ্ইু লাখ টাকার ক্ষতি হয় তার।
মেহেরপুর নতুন বাস টার্মিনালের পাশে একটি জমির মরিচ গাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ১০ কাঠা জমির মরিচ গাছ কেটে উজাড় করে দেওয়া হয়েছিল। মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের গত ১২ ডিসেম্বরে ঘটেছিল কলা গাছ কাটার ঘটনা। এখানেও দুই বিঘা জমির কলা কেটে নষ্ট করেছিল দূর্বৃত্তরা। ভুক্তভোগী চাষি একই গ্রামের শাহীন জানান, রাতের আঁধারে কে বা কারা এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছিল।
যে কারণেই হোক না কেন ব্যক্তির উপর রাগ ফসলের উপর দেখানো খুবই জঘন্য। চাষিদের ফসল কেটে নষ্ট করার সাথে যারা জড়িত তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
এমনটিই মন্তব্য করেছেন মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ। এছাড়াও তিনি বলেন, ফসল কেটে নষ্ট করার ঘটনা ইতোমধ্যে বেশ কয়েক জায়গায় ঘটেছে। যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তবে চাষিরা আতঙ্কে থাকবে।
এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসাশন) জামিরুল ইসলাম বলেন, এ ধরণের ঘটনা ঘটছে এটা আমরা শুনেছি। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত কিছু অভিযোগও আমাদের কাছে এসেছে। তবে যারা এই ধরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি অতি দ্রুত তাদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।