অতিমারি করোনা নিয়ে বিষাদময় কেটেছে সদ্য বিদায়ি বছর ২০২০ সাল। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে ওই বছরে। বিশ্ববাসী প্রযুক্তির নানা সুবিধা এবং কল্যাণকর দিক উপভোগ করেছে মানুষ।
এ বছর বিশ্বব্যাপী আরও ব্যাপকতা আসবে তথ্যপ্রযুক্তি ও এ খাতের পণ্য ব্যবহারে। নতুন বছরে যেসব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে, তা নিয়ে আজকের আয়োজন।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু থাকবে
মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনে যায় প্রায় দেশ। যে কারণে ঘরে থেকে অফিস করার যে পদ্ধতি প্রচলন হয়েছে, তা চালু থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিসিজি ইনশাইটের নিরীক্ষা বলছে, ইউরোপ-আমেরিকার ৬০ শতাংশ ব্যবসায়িক নেতারা মনে করছেন, করোনার পরও ২৫ শতাংশ অফিস কর্মীদের বাসায় বসে অফিস করার পদ্ধতি জারি থাকবে। বড় বড় বহু প্রতিষ্ঠানও ইতোমধ্যে কর্মীদের বাসায় থেকে কাজের সুযোগ দিয়েছে এবং এ সুযোগ দীর্ঘ সময় বহাল থাকবে। বাংলাদেশেও বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো হোম অফিস চলমান রয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফরম
বিদায়ি বছরে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং লাভবান হয়েছে ভিডিও কনফারেন্সিং বিভিন্ন প্ল্যাটফরম। বিশেষ করে জুম ভিডিও কলিং অ্যাপটি ব্যাপক বিস্তৃতি পেয়েছে। করোনার এ সময়ে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভূতি দিয়েছে ডিজিটাল এসব প্ল্যাটফরম। এ ছাড়াও মাইক্রোসফট টিম ও অ্যাপলের ফেইস টাইমে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করেছে। মানুষের ডিজিটাল সেবার অভ্যস্ততার সুবাদেই তরতর করে উত্থান ঘটেছে জুমের। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, মহামারির সময়টায় বিশ্বে ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা জুম। সদ্য আগত বছরটিও এসব ডিজিটাল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকবে বলেও ধারণা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের।
ফাইভজি
বিগত বছরে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিল পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট তথা ফাইভজির সময়ে নতুন এমন পৃথিবীর দেখা মিলবে যেখানে শুধু সব মানুষ-মানুষে নয়, বিশ্বের সব যন্ত্রপাতি-জিনিসপত্রও সবাই সবার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ইতোমধ্যে ফাইভজির আওতায় এসেছে বিশ্বের ১শ কোটিরও বেশি মানুষ। একইসঙ্গে ২০২৬ সালে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ ফাইভজি কভারেজের আওতাভুক্ত হবে এবং ফাইভজি সাবস্ক্রিপশন পৌঁছে যাবে ৩৫০ কোটিতে।
এরিকসন মোবিলিটি রিপোর্টের সর্বশেষ সংস্করণ অনুসারে, ২০২৬ সালে প্রতি ১০টি মোবাইল সাবস্ক্রিপশনের মধ্যে ৪টি হবে ফাইভজি। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে ১শ কোটিরও বেশি মানুষ যা কিনা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ, ফাইভজি কভারেজের এলাকায় এসেছে। অর্থাৎ, বছর শেষে সারা বিশ্বের মধ্যে ২২ কোটি ফাইভজি সাবস্ক্রিপশন আশা করা হচ্ছে। ২০২১ সালে তরঙ্গ নিলাম পরিকল্পনায় বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোয় পরের বছরে ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালুর বিষয় বিবেচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফোল্ডেবল ফোন
বেশ ঘটা করেই স্মার্টফোন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েকটি ফোল্ডেবল ফোন এনেছে বিগত বছরে। অ্যাপলসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি ফোল্ডেবলের পেটেন্ট নিয়েছে ইতোমধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে, ফোল্ডেবল ফোনের আরও মডেল আসবে ২০২১ সালে।
ফাইভজি স্মার্টফোন
চলতি বছর থেকেই ফাইভজি স্মার্টফোনের বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকরা ২০২১ সালে ফাইভজি স্মার্টফোনের বাজার আবার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন। এ বছর প্রায় ১৩০ কোটি ইউনিটের বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হবে।
টেক ইভেন্ট
করোনা মহামারির কারণে সোশ্যাল ডিস্টান্সিং জরুরি হয়ে পড়ে। যে কারণে এ বছর প্রায় সব টেক সম্মেলন বাতিল হয়েছে। ফলে আগামী বছর বার্সেলোনা মোবাইল কংগ্রেস-এর আয়োজন হবে গরমকালে। করোনা ভয়াবহতা থেকে কিছুটা মুক্তি পেলে হয়তো অন্য টেক ইভেন্টগুলোও আয়োজিত হবে।
পণ্য ডেলিভারিতে রোবট
লকডাউনের মধ্যে অ্যামাজনের ব্যবসা আরও অনেক বেড়েছে। এ সময়ে অ্যামাজন পণ্য ডেলিভারির জন্য রোবটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার চালিয়েছে। তারা মূলত ছোট একটি ট্রাকের মাধ্যমে এ পরীক্ষা চালায়। এ রোবটের নাম দেওয়া হয়েছে স্কাউট। ওয়াশিংটনের পায়ে হাঁটা পথে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার হচ্ছে এটি।
জানা গেছে, আপাতত অ্যামাজন ডেলিভারি কাজে ৬টি রোবট ব্যবহার করছে। এগুলো মানুষের ‘হাঁটার গতিতে’ পণ্য নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেবে। আগামী বছর ওয়্যারহাউসগুলোয় তারা পণ্য বহন ও প্যাকিংয়ের জন্য রোবটের ব্যবহারও বাড়াবে।
হোম অটোমেশন
হোম অটোমেশন সিস্টেম, যা একটি বাড়ির তিনটি মূল অংশ-হিটিং সিস্টেম, লাইটিং সিস্টেম এবং সিকিউরিটি কন্ট্রোল সিস্টেমসহ সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলোকে স্মার্ট উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করে। ইতোমধ্যে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে আশা করা হচ্ছে চলতি বছর স্মার্ট স্পিকারের ব্যবহারও বাড়বে। ভয়েস কমান্ড দিয়ে ঘরের লাইট ফ্যান অন বা অফ করাটা আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।