দেশ জুড়ে এখন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। ইতিমধ্যে সারা বাংলাদেশে ২০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এই প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস আতঙ্কে প্রভাব পড়েছে ব্যবসা, পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই।
করোনা ভাইরাস আতঙ্ক কে পুজি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করে দিচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করলেও দ্রব্যমূলের উর্ধগতি থামাতে পারছেন না।
বেশি দামে আমাদের কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের এই অযুহাতের কাছে যেন বন্দি প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
মেহেরপুরেও এর প্রভাব কোন অংশে কম নেই। ইতি মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে চালের বাজারে এর প্রভাবটা বেশি পড়েছে। রাতারাতিই বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০-১৫০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করলেও বেশি দামে কেনার ভাউচার দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
শুধু চালের বাজার না বেড়েছে কাঁচা বাজারের প্রতিটি পণ্যের দাম। এক্ষেত্রে সুযোগ নিয়েছে ছোট খাটো পরিবহন শ্রমিকরাও। রিক্সা অটো ইজিবাইক সহ বিভিন্ন পরিবহনে নেওয়া হচ্ছে বেশি ভাড়া।
মেহেরপুর, গাংনী ও মুজিবনগরে বাজার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেশি ধরা হচ্ছে।
মেহেরপুর হোটেল বাজারের বেশ কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী জানান, আমাদের মেহেরপুরে চাল উৎপাদন হয়না। বাইরে থেকে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়। সেখানেই দাম বেশি নিচ্ছে এক্ষেত্রে আমরা কি করবো।
ফল ও কাচা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী একই কথা বলেন। তবে মাংসের বাজারের দেশি মুরগীর দাম বৃদ্ধি পেলেও কমেছে বয়লার দাম সেই সাথে অপরিবর্তন আছে গরু-ছাগল।
এ বিষয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল আলম বলেন, করোনা আতঙ্ককে কেন্দ্র করে কেউ যেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না করে সেজন্য আমরা সার্বক্ষনিক তদারকি করছি। আপনারা জানেন, ইতিমধ্যে আমরা চালের বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছি। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি। সেই সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য গুলোর মধ্যে বেশ কিছু পণ্য ন্যায্যমূল্যে টিসিবি’র মাধ্যমে বিক্রয় করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটা চলমান থাকবে। আর ব্যবসায়ীদের ভিতর কেউ যদি বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাংনী প্রতিনিধি এ সাহিন সিদ্দীকি জানান, সারা দেশের ন্যায় গাংনীতেও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকাংশে ব্যর্থ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দাবি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান জানান, করোনা নিয়ে গাংনীতে যে কোন অস্থিতিকর পরিবেশ মোকাবেলাই আমরা প্রস্তুত। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে হোম কোয়ারেন্টাইন সব বিষয় গুলো আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
মুজিবনগর প্রতিনিধি শাকিল রেজা জানান, মুজিবনগরে বাজার পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক আছে। তবে চাল ও কাচা বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে রাখতে উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে।
এছাড়াও শাকিল রেজা আরও জানান, করোনা আতঙ্কে ভাটা পড়েছে মুজিবনগর পর্যটন ক্ষেত্রে। হঠাৎ করে লোক সমাগম অনকেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটন এলাকার ব্যবসায়ীরা পড়েছে লোকসানের মুখে। আশেপাশের এলাকা থেকে কিছু লোক সমাগম হলেও ব্যবসায়ীরা খেলনা সামগ্রী থেকে শুরু করে অনান্য পণ্যের দাম হাকাচ্ছে বেশি। সেই এই এলাকার পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রিদের কাছ থেকে নিচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওসমান গনি জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে আমরা সব সময় খোজ খবর রাখছি। দ্রব্যমূল্য যদি বেশি নেয় তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
এছাড়া আজ শনিবার থেকে আমরা নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করবো। মুজিবনগর পর্যটন কেন্দ্রের বিষয়ে তিনি জানান, করোনা মোকাবেলার জন্য মুজিবনগর পর্যটন বন্ধ করা হয়েছে।