ঘরোয়াভাবে সভা-সমাবেশ না করে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, সরকার পদত্যাগ না করলে লাথি মেরে নামাতে হবে।
সত্যিকার অর্থে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হবে। সেই সংসদে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে তারা দেশ পরিচালনা করবে। এখন যারা আছে, তাদের লাথি মেরে দেশ থেকে বের করে দিতে হবে। পদত্যাগ পদত্যাগ বললে হবে না। পদত্যাগ না করলে তাদের হাত ধরে টেনে রাস্তায় নামিয়ে দিতে হবে। সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশের মালিকের ভূমিকায় আসতে হবে।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর ও তার মুক্তির দাবিতে এক প্রতিবাদ সভায় ড. কামাল হোসেন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হলে দুর্নীতির শিকার হতে হয়, লুটপাটের শিকার হতে হয়, উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে হলে দেশের মালিককে মালিক হিসেবে দাঁড়াতে হবে। সত্যিকার অর্থে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠন করতে হবে।
ড. কামাল ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের নামে প্রহসন সহ্য করতে হচ্ছে। যারা নির্বাচিত না, তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছে। এটা জনগণ মেনে নেবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজের অধিকার কেড়ে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে দেখেছি, জনগণের অধিকার বঞ্চিত করে কেউ স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। যে শাসকরা চেষ্টা করেছে, তাদের ভয়াবহ পরিণতি হয়েছে। আজ যারা স্বৈরাচার চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সেই ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখা দরকার যে, বাঙালি কখনও স্বৈরাচারকে মেনে নেয়নি। আজ আমরা সবাই চাই, শান্তিপূর্ণভাবে দেশটাকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।’
মানুষকে বঞ্চিত করে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করা প্রহসন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা প্রহসন করে ক্ষমতায় এসেছে, এখন সময় এসেছে তাদের সহজ ভাষায় বলা সরে দাঁড়াও।’
তিনি বলেন, ‘তারা কী কী প্রচার করছে, অমুক বর্ষ এভাবে উদযাপন করবে। সবাইকে একভাবে উদযাপন করতে হবে। মালিক হিসেবে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে, এটা একটা প্রহসন।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি জন্য প্রতিবাদ সভায় খালেদা ও রাজবন্দি প্রসঙ্গে বলার জন্য ড. কামাল হোসেনকে কয়েকবার স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর রাজবন্দি শুনতে কেমন লাগে। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সভা করতে হবে, দাবি করতে হবে এটা অকল্পনীয়।’ তিনি বলেন, ‘এখন আর এই ধরনের সভা নয়। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে সামনে রেখে মাঠে নামব।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব সরকারপ্রধানের উদ্দেশে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে যেতে চাইলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন করা না গেলে গণ-আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থান গড়ে তুলতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, রাষ্ট্র চালাতে গেলে অনেক সময় ভুল হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ের সঙ্গে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধী দলকে মেলানো ঠিক হবে না বলে দাবি করেন। তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ওপর মামলা ও জেলে ভরে রাখার উদাহরণ টেনে বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে এমন আচরণ করেনি। মঈন খান ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে সরকার পতনের আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য একত্রে আন্দোলনের চিন্তা আছে কিনা, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অর্থনীতি ধসে সরকারের কাছে টাকা নেই। এখন বিভিন্ন সংস্থার উদ্বৃত্ত টাকা জমা নিচ্ছে। তিনি সরকার পতনের জন্য জোরালো আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। বিএনপিরও সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। এই সরকার থেকে মুক্তি চাইলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরী কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ঠিক হবে না। কামাল হোসেনকে রিভিউ পিটিশন করতে হবে। এ ছাড়া তিনি কামাল হোসেনকে সারা দেশে পদযাত্রা করার আহ্বান জানান। সভায় আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোহসীন রশিদ খান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. নুরুল আমীন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার।
সুত্র-যুগান্তর
আরো পড়ুন-এসএসসি পরীক্ষার হলে হয়রানি, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রীর স্ট্যাটাস ভাইরাল