টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মার পানি বাড়ছে। এর ফলে কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুরের ৪টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপজেলার চিলমারি এবং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
লোকালয়ে পানি না ঢুকলেও নিম্নাঞ্চলের আবাদি ফসল তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২শ’ হেক্টর জমির মাসকলাই আর মরিচ ক্ষেত ডুবে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তা ঘাটও। সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম। এভাবে পানি বাড়তে থাকায় এলাকাবাসী শঙ্কায় থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড আর স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন বৃষ্টি না হলে পদ্মার পানিও কমতে থাকবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, দৌলতপুর অংশে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে পদ্মায় পানি বাড়ছে। উপজেলার ভাগজোত এলাকায় গত ১০ দিনে ১.৭৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ০.১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পয়েন্টে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ছিল ১৪.২৬ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ১.৪৪ সেন্টিমিটার নিচে।
এদিকে দৌলতপুরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন উপজেলার ৪ ইউনিয়নের প্রায় ৩৬ গ্রামের মানুষ। বসতবাড়িতে পানি না ঢুকলেও বাড়ির আশপাশে ঢুকে পড়েছে পানি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওইসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ক্ষেতের ফসল বিশেষ করে মাসকলাই আর মরিচের ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় ভীষণ ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছেন তারা।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামরে কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, এবার তিনি চরে ৮ বিঘা জমিতে মাষকলাইয়ের আবাদ করেছেন। কিন্তু পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় তার কলাইক্ষেত ডুবে গেছে। এতে ভীষণ ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলেও জানান তিনি।
একই ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের আনারুল ৭ বিঘা মাসকলাই আবাদ করেছেন। ক্ষেতের সবটুকুই তলিয়ে গেছে পানিতে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তিনি।
পার্শ্ববর্তী চিলমারি ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বসতবাড়িতে পানি না ঢুকলেও অবশিষ্ট নেই ওই এলাকার কোনো ফসলি জমি। কৃষক ফয়জুর রহমান স্বাধীন জানান, এবার তিনি ১৪ বিঘা জমিতে মাষকলাই আবাদ করেছেন। আগামী অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে ফসল ঘরে তোলার কথা। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় তার ক্ষেতের সব মাষকলাই ডুবে গেছে। এতে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
চিলমারি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ একজন বড় চাষি। এবার তিনি ৩৪ বিঘা জমিতে মাষকলাইয়ের আবাদ করেছেন। পদ্মার পানি আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় মাষকলাই ক্ষেতের সবটুকুই ডুবে গেছে। পানি না কমলে সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, আকস্মিক পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মাষকলাই, মরিচসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার ইউনিয়নের প্রায় ১৬টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম লেমন জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে মাসকলাই চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার ৬৫ শতাংশই চাষ হয় চরাঞ্চলে। ইতোমধ্যে প্রায় ২শ’ একর জমির মাসকলাই ও মরিচ ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। পদ্মার পানি আকস্মিক বৃদ্ধিতে জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বড় রকমের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসায় গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আরও দু’একদিন পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। তারপর কমতে পারে পানি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী ভাঙনরোধে উপজেলার উদয়নগর বিজিবি ক্যাম্পের নিকট জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলা হচ্ছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবাইদুল্লাহ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে।