চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন নিপুণ আক্তার।
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিপুণের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।
এর আগে বুধবার চিত্রনায়ক জায়েদ খানকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে বৈধতা দিয়ে নির্বাচনি আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন।
আদালতে জায়েদ খানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ন, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। চিত্রনায়িকা নিপুণের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ।
রায়ের পরই নিপুণ বলেছিলেন, আমি ন্যায়বিচার পাইনি। আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিপুণের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখন নিপুণ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবেন। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপির জন্য দরখাস্ত করব। এর মধ্যে সিএমপি ফাইল করব। স্টে চাইব।
এদিকে নিপুণকে উদ্দেশ করে জায়েদ খান বলেন, শিল্পী সমিতির নির্বাচন শুধু একটা মালাবদলের পালা মাত্র। নিপুণের উচিত ছিল পরাজয় মেনে নিয়ে ফুল দিয়ে আমাকে বরণ করা। তিনি আমার সমিতির সদস্য। আমার কথা হচ্ছে শিল্পীদের উন্নয়নে কাজ করে যাব। চেয়ার নিয়ে টানাটানি, এটা যেন তিনি না করেন। মানুষ যাতে শিল্পী সমিতিকে ভিন্নদৃষ্টিতে দেখে, এমন কাজ যাতে তিনি না করেন।
২৮ জানুয়ারি শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন প্রাথমিক ফলাফলে জায়েদ খানকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে জয়ী ঘোষণা করা হয়। পরে নির্বাচনি আপিল বোর্ডের কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন নিপুণ। আপিল বোর্ড সমাজসেবা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তর এক চিঠিতে জানায়, আপিল বোর্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি আপিল বোর্ড জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে।
৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি আপিল বোর্ডের প্রার্থিতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন জায়েদ খান। সেই রিটের শুনানি নিয়ে নির্বাচনি আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এক সপ্তাহের মধ্যে মামলার বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল করেন নিপুণ আক্তার।
আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে শুনানির পর ৯ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে আদেশ দেন আদালত। চেম্বার আদালত বাংলাদেশ শিল্পী সমিতি নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। একই সঙ্গে ১৩ ফেব্রুয়ারি নিপুণ আক্তারের আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। পাশাপাশি ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলেও আদালত আদেশ দিয়েছিলেন। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টকে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।