একাদশ শ্রেণির ক্লাসে এখন এক ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা ড্রেস কোড মানে, নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হয়, মনোযোগী হয়ে ক্লাস করছে। এক সময় যেখানে ধারাবাহিক ক্লাসের ধারনাই অসম্ভব ছিল, সেখানে এখন নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠেছে।
কয়েক বছর আগেও এই দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন ছিল। ব্যবহারিক ক্লাস তো দূরের কথা, সাধারণ ক্লাসের উপস্থিতিও ছিল হতাশাজনক। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন, পরীক্ষাগুলো হচ্ছে নির্ধারিত নিয়ম মেনে। কিছু শিক্ষক নিয়োজিত আছেন ক্যাম্পাসের পরিবেশ তদারকিতে, যাতে ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীরা বাইরে ঘোরাঘুরি না করতে পারে।
মেহেরপুর সরকারি কলেজের বর্তমান চিত্র এটি। বিশেষ করে বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ কে এম নজরুল কবিরের যোগদানের পর কলেজের চেহারায় এক অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে কলেজের অব্যবস্থাপনা দেখে দ্রুত সংস্কারে হাত দেন।
তিনি শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিয়মিত ক্লাস পরিদর্শন শুরু করেন, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝেও। আগে যেখানে শিক্ষার্থীরা অনিয়মিত ছিল, এখন তারা আগ্রহ নিয়ে ক্লাস করছে। পরীক্ষাগুলোও এখন জাতীয় মানের সিট প্ল্যান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হচ্ছে, রেজাল্ট প্রকাশ হচ্ছে নির্ধারিত নিয়মে।
কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক এস এম আশরাফুল হাবিব বলেন, “কলেজটি আগে গোচারণ ভূমি ছিল। আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার যোগদানের পর থেকে কলেজকে দৃষ্টিনন্দন করার প্রচেষ্টা শুরু করেন। তিনি কলেজে সূর্যমুখী ফুলসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ রোপণ করে সবুজে ভরিয়ে তুলেছেন। আইটি খাতে আধুনিকায়নে স্যারের অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যার ফলে এখন রেজাল্ট গ্রহণ, অর্থ জমা দেওয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, “স্যার দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বাসী এবং সবকিছুতেই তা বাস্তবায়ন করেছেন। কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করতে তিনি পুরো সিস্টেম কম্পিউটারাইজড করেছেন। কলেজের হিসাব রক্ষণ বিভাগ আধুনিকায়ন করা হয়েছে, আইটি সেকশনে চালু হয়েছে বিশেষ ট্রেনিং কোর্স।”
অধ্যক্ষের উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলেজের পরিবেশে নতুন প্রাণ ফিরে এসেছে। শিক্ষকরা একযোগে কাজ করছেন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য। ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় মেহেরপুর সরকারি কলেজ এখন শুধু জেলারই নয়, গোটা অঞ্চলের শিক্ষাঙ্গনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “আমাদের নতুন প্রিন্সিপাল স্যার যোগদানের পর কলেজ যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তিনি কলেজে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করেছেন এবং বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। আমাদের সকলের জন্য ড্রেস কোড নির্ধারণ করেছেন। এছাড়াও এখন নিয়মিত ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা আমরা আগে এই কলেজে কখনও দেখিনি।”
কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আব্দুল লতিফ বলেন, “যে কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি নেতৃত্ব ভালো হয়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান হোক তা কলেজ বা অন্য কোনো ইন্ডাস্ট্রি, ভালোভাবে পরিচালিত হয়। আমাদের বর্তমান প্রিন্সিপাল স্যার যোগদানের পর থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কলেজকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের অনেক কলেজে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নেয়া হয় না, কিন্তু স্যার এখানে নিজ উদ্যোগে বিনা খরচে চারটি টিউটোরিয়াল পরীক্ষা পরিচালনা করছেন। আমাদের সিলেবাস এমনভাবে সুষমভাবে বণ্টন করা হয়েছে যে, টেস্ট পরীক্ষায় কী হবে এবং ফাইনাল পরীক্ষায় কী থাকবে, তা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত আছে। প্রতিটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে নিয়মিত ক্লাসও পরিচালিত হচ্ছে। এই সবকিছু মিলিয়ে কলেজের আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ কে এম নজরুল কবির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে জানান, “একটি নামকরা কলেজ একদিনে গড়ে ওঠে না। যদি আমরা আমাদের মেহেরপুর সরকারি কলেজকে সেই আদলে গড়ে তুলতে চাই, তবে শিক্ষক, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের একযোগে কাজ করতে হবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, “মেহেরপুরের এই ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন কলেজের পুরনো গৌরব আমরা অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে পারবো।”