কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ‘আলজাজিরায় গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘অল দি প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে পুলিশ সম্পর্কে মনগড়া, উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। গণমাধ্যমে পাঠানো অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক (অতিরিক্ত উপ-কমিশনার) আর এম ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে প্রতিবেদনটিকে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রচারিত দুরভিসন্ধিমূলক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
প্রতিবাদ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পুলিশের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি। বেনজীর আহমেদ পুলিশ সদস্যদের সব ধরনের অপেশাদার আচরণ ও মাদকের সঙ্গে পুলিশের যে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার ক্ষেত্রে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি প্রদর্শন করে চলেছেন। পুলিশের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম/দুর্নীতি রোধে কাজ করছেন আইজিপি। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনে ফৌজদারি অথবা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের সর্বোচ্চ জবাবদিহিতা ও পেশাগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ। সর্বোপরি, আধুনিক বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে তিনি পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, যা ইতিমধ্যে বাস্তব রূপ লাভ করেছে। তাঁর এ উদ্যোগ জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। করোনাকালে বর্তমান আইজিপির নেতৃত্বে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত ৮৫ জন পুলিশ সদস্য জনগণের সেবায় আত্মোৎসর্গ করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার পুলিশ সদস্য।
প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আলজাজিরার প্রতিবেদনে জনৈক ব্যক্তির বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার কর্তৃক উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে ওসি পদায়নের কথা উল্লেখ করেছেন। ওই ব্যক্তি আদৌ এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করেছেন নাকি কাট, কপি ও পেস্ট করে এ বক্তব্য তৈরি করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানের কারণে বর্তমান প্রজন্মের পুলিশিং এবং পুলিশের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে তার কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। উপরন্তু বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান প্রজন্মের অফিসারদের সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। সাক্ষাৎকারে পুলিশ সম্পর্কে তার প্রদত্ত বক্তব্য কল্পনানির্ভর মর্মে প্রতীয়মান হয়।
ডিএমপির এয়ারপোর্ট থানায় ওসি বদলি সম্পর্কে ওই ব্যক্তির বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে, ডিএমপির এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের অধিক্ষেত্র অন্যান্য থানার মতো বিস্তৃত নয়। ডিএমপির ৫০টি থানার আয়তনের দিক বিবেচনায় সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম আয়তনের থানা এয়ারপোর্ট থানা। এ থানা এলাকায় অন্যান্য থানার তুলনায় কম সংখ্যক জনগণ বসবাস করেন। এ ছাড়া, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টটি এয়ারপোর্ট থানার মধ্যে অবস্থিত হলেও এয়ারপোর্ট ও তৎসংলগ্ন সংরক্ষিত এলাকায় এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের কর্মপরিধি অত্যন্ত সীমিত।
এয়ারপোর্ট ও তৎসংলগ্ন সংরক্ষিত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও অপরাধমূলক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), অ্যাবসেক (অইঝঊঈ), ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস, সিভিল এভিয়েশন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে বা যৌক্তিকভাবে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের প্রয়োজন হলে সুরক্ষিত এয়ারপোর্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাই দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো ঘটনায় মামলা রুজু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে সংশিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ দাখিল করেন এবং গ্রেফতার ব্যক্তিকে থানায় সোপর্দ করেন। এয়ারপোর্টের সব ধরনের কার্যক্রম সিসিটিভি মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা এয়ারপোর্ট থানার কার্যক্রম সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন। অধিকন্তু এয়ারপোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা টহল কার্যক্রম ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পালন করে থাকে।
প্রতিবেদনে জনৈক ব্যক্তি তার বক্তব্যে এয়ারপোর্ট থানার ওসি বদলি/পদায়নের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনারের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সৎ, সজ্জন এবং আদর্শ রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত। থানায় ওসি পদায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী তিনি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন। সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একজন সম্মানিত ব্যক্তি সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ‘ক্লিন ইমেজের’ একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত। পুলিশপ্রধান হিসেবে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের প্রশাসনিক কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী থানায় ওসি বদলি/পদায়নের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নন।
এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, ওই ব্যক্তির পুলিশে বদলি/পদায়ন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই। ডিএমপির বর্তমান পুলিশ কমিশনার একজন দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত। তিনি পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর পরই থানায় আগত সেবাপ্রত্যাশীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন এবং যথাযথ আইনি সেবা পান সে লক্ষ্যে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সে ক্ষেত্রে থানায় ওসি বদলি/পদায়নে উৎকোচ গ্রহণের প্রসঙ্গের অবতারণা বাতুলতা মাত্র। এতে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশ পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে ওই ব্যক্তির কোনো ধারণাই নেই। এ ধরনের বক্তব্য তার কল্পনাপ্রসূত এবং বানোয়াট।
আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনাকারী বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের প্রতি অবিচল আস্থা এবং শ্রদ্ধা রেখে দেশ ও জনগণের কল্যাণে অহর্নিশ কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ পুলিশ দেশের যে কোনো প্রয়োজন ও সংকটে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণে যখন বাংলাদেশ পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী করে বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা হচ্ছে, তখন একটি মহলের এ ধরনের দুরভিসন্ধিমূলক প্রতিবেদন প্রচার অত্যন্ত অনাকাক্সিক্ষত।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম এ প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। সুত্র:- বিডি প্রতিদিন