নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও ক্রটিপূর্ণ থাকায় দুই কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৪ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন গ্রহণ করেনি মেহেরপুর সদর উপজেলার সুবিদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে তত্বাবধানে বিদ্যালয়ের জন্য নির্মিত ৪ তলা এই বিল্ডিংটিতে নানা ত্রুটির অভিযোগ এনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ভবনটি গ্রহণ করেননি বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহাবুল ইসলাম।
লটারিতে মেহেরপুর জনি এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর ছোট ভাই মেহেরপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সরফরাজ হাসান মৃদুল কাজটি করেছেন।
তবে, একাডেমিক ভবন নির্মানের ঠিকাদার সরফরাজ হাসান মৃদুল ভবন নির্মানে কিছু অনিয়ম হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, আমি ঢাকাতে থাকার কারনে কিছু অনিয়ম হয়েছে। দ্রুত সেগুলোর সমাধান করা হবে।
২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে প্রায় ২ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে মেহেরপুর সদর উপজেলার সুবিদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১২ মে ২০১৯ সালে।
ভবনটি বিগত ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর নির্মাণ কাজ শেষ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করার শেষ সময় ছিল। কিন্তু দেরি করে কাজ শুরু হওয়ায় শেষ হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ১৭টি অনিয়ম ও ত্রুটির কথা উল্লেখ করে সেগুলো ঠিক করার জন্য চিঠি দিয়েছেন।
একাডেমিক ভবন নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ এনে প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন এই একাডেমিক ভবনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গ্রহণ করেনি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। শুরু থেকেই ওই ভবনের নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ করা হলেও ঠিকাদার কোনো কর্ণপাত করেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি রুমের জন্য ৪টি করে ৪৮টি বৈদ্যুত্যিক পাখা রয়েছে। এসব বৈদ্যুত্যিক পাখাগুলো নিম্নমানের প্রদান করা হয়েছে। পাখাগুলোতে কোন কোম্পানীর সিল নেই। মনে হয়েছে রং করা পাখা ঝুলানো রয়েছে। প্রতিটি ফ্যানের মুল্য ৩৩৯৯ টাকা এবং রেগুলেটরের দাম ধরা হয়েছে ৩৩৬ টাকা। একটি ইলেক্ট্রিক ঘড়ি দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি প্রদান করা হয়নি। এছাড়া রুমের ভিতরের ইলেক্ট্রিক ওয়্যারিং এর উপকরণ, বৈদ্যত্যিক সুইচ, হোল্ডার, লাইটসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে নিম্ম ব্র্যান্ডের। ভবনের রং করণ ও বাইরের স্যুয়োরেজ ফিটিংস এর পাইপ বসানোতেও রয়েছে নানা ধরণের অসঙ্গতি।
বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৩১০ জন ছাত্র ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। শ্রেনী কক্ষ সংকট, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলসহ নানা ধরণের সমস্যা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের নতুন ভবন হস্তান্তরের শেষ সময় ছিল ২০২০ সালে। তবে দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো হস্তান্তর না হওয়ায় তারা নতুন ভবনে যেতে পারেনি। ফলে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে নানাভাবে।
ঠিকাদার সরফরাজ হোসেন মৃদুল বলেন, ভবনের বৈদ্যুত্যিক পাখাগুলো যমুনা ব্র্যান্ডের দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উপকরণ এবং রং এর যে অভিযোগগুলো আছে আমি অধিকাংশ সময় ঢাকাতে অবস্থান করার কারণে এমন সমস্যা হয়েছে। আমি লোকজন নিয়ে দু একদিনের মধ্যেই সব ঠিকঠাক করে হস্তান্তর করবো।
মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: গোলাম মোত্তাকিন বলেন, এই ভবনটি নির্মাণে আমাদের দৃষ্টিতে মোট ১৭ টি ত্রুটি পাওয়া গেছে। এই ত্রুটিগুলো ঠিক করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।