করোনায় কর্মহীন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের জন্যে প্রণোদনা বিতরণে নানা অনিময় ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ পাওয়া ৬৭ জনের তালিকায় শিল্পকলার কর্মচারী, শিল্পী নন এমন ব্যক্তির নাম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বাদ পড়েছেন করোনায় কর্মহীন প্রকৃত শিল্পী কলাকুশলীদের অনেকেই।
অভিযোগ রয়েছে শিল্পকলার সাধারণ সম্পাদক ও পরিষদের লোকজনের যোগসাজসে নিজ আত্মীয় ও শিল্পী নন, শিল্পকলার কর্মচারী, কর্মচারীর আত্মীয় ও বন্ধু এমনকি শিল্পকলার দর্শককেও তালিকা করে তাদের প্রণোদনার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিল্পকলার এই প্রণোদনার তালিকায় থাকা নামগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই তালিকা প্রস্তুতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত পছন্দের। যারা কেউ নিয়মিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তি নন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিল্পকলার মাধ্যমে মেহেরপুরে দুই দফায় প্রণোদনা দেওয়া হয়। প্রথম দফায় ৫ হাজার করে ৫০ জনকে এবং ২য় দফায় ১০ হাজার করে ৬০ জনকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে সুমন পারভেজ, শরিফুল ইসলাম শিল্পকলার কর্মচারী অথচ নাট্যশিল্পী হিসেবে তাদের দেওয়া হয়েছে প্রণোদনার টাকা। মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের আলী আকবর, তিনি শিল্পকলার কর্মচারী কামরানের বন্ধু, ইছাখালীর মঈনুল ইসলাম কামরানের আত্মীয়, শহরের তাঁতীপাড়ার আব্দুল আজিজ শিল্পকলার একজন দর্শক, কামদেবপুর গ্রামের রুনা খাতুন মহীতের আত্মীয়, যাদবপুর শ্যামল আলী মহীতের আত্মীয়, পিয়াদাপাড়ার তরিকুল ইসলাম চাতাল ব্যবসায়ী, মুখার্জীপাড়ার মহির উদ্দিন শিল্পকলার নিয়মিত দর্শক, বড় বাজার এলাকার কানন বালা, জয়া দত্ত যাত্রা বা সংগীতের সাথে জড়িত নন, গোহাট পাড়ার তারিফ হোসেন একজন ব্যবসায়ী, কোর্টপাড়ার আজিবর রহমান একজন ঠিকাদার, কামদেবপুর গ্রামের আঃ সামাদ একজন টিভি মিস্ত্রি হলেও পেয়েছেন প্রণোদনার টাকা।
এবিষয়ে জানতে মইনুল ইসলাম বলেন, আমরা মেহেরপুর শিল্পকলায় সঙ্গীত করি। আমি ওতো গ্রুপ বুঝি না, আমি মূর্খ সূর্খ মানুষ ,শুধু সঙ্গীত গাই।
রুনা খাতুনকে ফোন করলে একজন পুরুষ ধরে বলে আপনি যে নাম্বারে ফোন দিয়েছেন সেটা ভুল নাম্বার। শিল্পকলার প্রণোদনার লিষ্টে আপনার নাম্বার কেন জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।
শ্যামল আলী বলেন, আমি মেহেরপুর শিল্পকলায় সঙ্গীত পরিবেশন করি। আমি যাদুবপুর রোডের ভৈরব সংস্থার দলে গান গাই।
কানন বালা যে মোবাইল নাম্বার দিয়ে শিল্পকলা থেকে আর্থিক অনুদান পেয়েছেন সে নাম্বারে কল দেওয়া হলে কানন বালার বোনের ছেলে শ্যামল ভট্টাচার্য্য কলটি ধরেন। এর পর শ্যামল ভট্টাচার্য্য কাছ থেকে কানন বালার ছেলের নাম্বার নিয়ে কল দেওয়া হলে সেটি আবার জয়া দত্তর নাম্বারের সাথে মিলে যায়। ঘটনা সুত্রে জানা যায় যে কানন বালারা আপন জা জয়া দত্ত যে শিল্পকলা থেকে আর্থিক অনুদান পেয়েছে।
কানন বালার এক প্রতিবেশী বলেন আমার বয়স ৪০ বছর আমি জীবনে কোনো দিন উনাকে যাত্রা করতে দেখি নি তবে কানন বালার ছেলে বিভিন্ন নেতাদের সাথে উঠ-বোস করেন সেই তার মায়ের নাম দিয়ে দিচ্ছে তাই হয়ে যাচ্ছে।
এ সময় জয়া দত্তর ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন জয়া দত্ত প্রাচীন শিল্পী এর আগে সে গান করতো কিন্তু বর্তমানে এখন আর সে গান করে না। জয়া দত্তের কোনো ছেলে মেয়ে নাই সেই জন্য কানন বালার ছেলে বিদ্যুৎতের মোবাইল নাম্বার দেওয়া আছে।
মৃত্তিকা গ্রুপ থিয়েটারের সভাপতি মানিক হোসেন জানান, দুই দফায় তার সংগঠনের দুই জন প্রণোদনা পেয়েছেন। তবে শিল্প সাংস্কৃতির সাথে জড়িত না এমন কেউ প্রণোদনা পেয়েছেন কিনা তার জানা নেই।
অরণী থিয়েটারের সভাপতি নিশান সাবের বলেন,শিল্প সাংস্কৃতির সাথে জড়িত না এমন অনেকে প্রণোদনা পেয়েছেন। যা অনুচিত হয়েছে। তাঁতীপাড়া আব্দুল আজিজ শুধুমাত্র একজন দর্শক। এছাড়া তাকে কখনো শিল্পি হিসেবে দেখিনি। এরকম অনেকেই প্রণোদনা পেয়েছেন শুনেছি। আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের দির্ঘ সময়ে তাদের কাউকে এ অঙ্গনে দেখিনি, এমনকি আমি চিনিও না।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, প্রণোদনার টাকা একেক জনের একেক রকম আছে, বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম আছে। করোনাকালীন সময়ে দেওয়া হয়েছিল ৫ হাজার করে। প্রথমবার নাম চাওয়ার পর শিল্পীদের নাম পাঠানো হলে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে আবার ৫ হাজার করে মোট ১০ হাজার দেওয়া হয়। সুমন পারভেজ, শরিফুল ইসলাম শিল্পকলার কর্মচারী তারা কিভাবে প্রণোদনার পেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন লাইট অপারেটর, সাউন্ড অপারেটর এরা সবাই শিল্পী। প্রণোদনার তালিকায় নাট্যশিল্পী লেখা আছে মানে ওরা নাটকও করে, আমরা ওদের নাটকও করায়। নাটকে যারা লাইটিং করছে ,সাউন্ড করছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে যারা আছে তাদেরও নাট্যশিল্পী বলা যাবে। যে চেয়ার টানছে মঞ্চে তাকেও নাট্যশিল্পী বলা যাবে। নাট্যশিল্পী বলতে বহু ধরনের ক্যাটাগরি আছে।