বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি কর্মসংস্থান এবং শিল্প খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। ২০২৫ সাল এআই-এর প্রসার এবং এর প্রভাব মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়লেও কর্মচ্যুতির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে রিজিউম টেমপ্লেটস পরিচালিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৩০ শতাংশ কোম্পানি কর্মীর পরিবর্তে এআই ব্যবহার করেছিল, যা চলতি বছরে ৩৮ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্মী ছাঁটাইয়ের বর্তমান প্রবণতা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রযুক্তি, বিমান এবং খুচরা শিল্পে বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাই লক্ষ করা গেছে বড় কোম্পানিগুলোয়; যেমন, অ্যামাজন, বোয়িং এবং স্পিরিট এয়ারলাইনস কর্মী কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। মেটা, ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি, জানুয়ারি মাসে কাজে পিছিয়ে থাকা কর্মীদের মধ্যে ৫ শতাংশ ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। মাইক্রোসফটও দক্ষতার ভিত্তিতে কিছু কর্মী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২৩ সালে মেটা এবং অ্যামাজনের মতো কোম্পানিগুলো ব্যাপক ছাঁটাই শুরু করে। মেটা প্রথমে ১১ হাজার এবং পরে আরও ১০ হাজার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে। অ্যামাজন একই সময়ে ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ধরনের ছাঁটাইয়ের একটি মুখ্য কারণ হলো এআই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ।
এআইয়ের অগ্রগতির ইতিবাচক দিক
যদিও কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন, এআই নতুন সুযোগও সৃষ্টি করছে। এআই-এর অগ্রগতি বিভিন্ন শিল্প খাতে দক্ষতার মান বাড়াচ্ছে। জুলিয়া টুথেকার, রিজিউম টেমপ্লেটস-এর প্রধান ক্যারিয়ার স্ট্র্যাটেজিস্ট বলেছেন, ‘এআই এমন কাজ সম্পাদনে সক্ষম, যেখানে কম সময় ও কম শ্রম প্রয়োজন। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট পদে কর্মীসংখ্যা কমাতে পারছে।’ এআই প্রযুক্তি বড় বড় কোম্পানিকে নতুনভাবে নিজেদের কর্মীবাহিনী সাজাতে সাহায্য করছে। বিশেষ করে গুগল ও মেটার মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো এ প্রযুক্তির ওপর আরও মনোযোগ দিচ্ছে। এআই বিভিন্ন খাতে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করছে, যেখানে মানবীয় যোগাযোগ, সৃজনশীলতা এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনার গুরুত্ব রয়েছে।
নতুন চাকরির সম্ভাবনা
এআই-এর উদ্ভাবন নতুন ধরনের চাকরির সুযোগ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে এমন কাজ, যা কেবল মানুষের সৃজনশীলতা ও আবেগী বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, কনটেন্ট ক্রিয়েশন, ডিজাইন এবং স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্টের মতো কাজগুলোতে মানুষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ থেকে যাবে। এছাড়া এআই পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ পেশাদারদের প্রয়োজন হবে। এ খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য সরকার এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়ানো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও এআই সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের প্রস্তুতি
এআই-এর অগ্রগতি চাকরির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনলেও এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মীদের জন্য পুনঃপ্রশিক্ষণ এবং নতুন দক্ষতা অর্জন এ সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এবং কোম্পানিগুলোর উচিত কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।
বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি কর্মসংস্থানের ধরন পরিবর্তন করছে। এআই যেখানে কিছু কাজকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলছে, সেখানে নতুন কাজের ক্ষেত্রও তৈরি করছে। কর্মসংস্থান বাজারে এ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রযুক্তিগত ও মানবিক দক্ষতার সমন্বয় করতে হবে।
সূত্র: যুগান্তর