এম এফ রুপক / ফয়সাল আহম্মেদ
মেহেরপুরে ইতোমধ্যে নতুন পেয়াজ উঠতে শুরু করেছে। ঘরে ঘরে চলছে পেয়াজ কাটার উৎসব। খোলা বাজারেও দেখা মিলছে পেয়াজের। কিন্তু লাভের আশায় পেয়াজ চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছে এলাকার চাষিরা। ন্যায্য দাম না পেয়ে বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে চাষিরা। অনেক জমিতে পেয়াজ পরিপক্ক হলেও দাম না থাকায় তুলতে পারছে না চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি এ বছর মেহেরপুরে প্রায় ৩ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে পেয়াজের চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এ বছর পেয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে মেহেরপুরে। তবে দাম না পেয়ে হতাশায় ভুগছে এলাকার চাষিরা। সম্প্রতি ভারতীয় পেয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ ও দেশের সব জায়গাতে একই সাথে পেয়াজ তোলাতে দাম কমেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে কাঁচা পেয়াজ পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা দরে। বিঘা প্রতি ফড়িয়ারা দাম দিচ্ছে ২০- ২৫ হাজার টাকা। অথচ এক বিঘা জমিতে পেয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৩৫- ৪০ হাজার টাকা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের পেয়াজ চাষী সেলিম, আব্দুল আজিজ, মাবুদ, ছপের আলী, ইলিয়াস, ছাদ্দামসহ বেশ কয়েকজন জানান, সোনাপুর গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ লাভের আশায় পেয়াজ চাষ করেছে। কোন কোন চাষী বিভিন্ন জায়গায় লোন করেছে পেয়াজ চাষের জন্য। কথা ছিল পেয়াজ বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবে। কিন্তু টাকা পরিশোধ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না চাষিদের। এমন অবস্থায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে এলাকার পেয়াজ চাষিরা।
পেয়াজ চাষি স্বপন বলেন, আমি এবছর ১২ বিঘা জমিতে পেয়াজ চাষ করেছি। পেয়াজ পরিপক্ক হয়েছে। আমি ২ বিঘা জমির পেয়াজ তুলে বিক্রি করেছি। তাতে আমার লস হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। বাকি ১০ বিঘা জমিতে এখনো পেয়াজ রয়েছে। দাম কম থাকায় তুলতে পারছি না।
মেহেরপুর সদর উপজেলার পেয়াজ চাষি রকিবুজ্জামান বলেন, যারা আগাম পেয়াজ চাষ করেছে তাদের লাভ হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও পেয়াজের দাম সন্তসজনক ছিল। কিন্তু এখন একেবারেই দাম নেই। এই দামে পেয়াজ বিক্রি করলে খরচের অর্ধেক টাকাও পেরত পাওয়া যাবে না।
মেহেরপুর কাস্টম অফিসের এক কর্মকর্তা সোনাপুর গ্রামের পেয়াজ চাষি কামাল উদ্দিন জানান, প্রতি বছর লাভের আশায় পেয়াজ চাষ করা হয়। এবারও করেছি। কিন্তু যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠবে না। আমাদের মেহেরপুরে যদি পেয়াজ সংরক্ষাণাগার থাকতো তবে এই সিজনে পেয়াজ সংরক্ষণ করা যেত। তিন্তু সে ব্যবস্থা মেহেরপুরে নেই। এমন অবস্থায় আমরা চাষিরা খুব ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
এ বিষয়ে মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারনণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি সিজনে মেহেরপুরে পেয়াজের বেশ বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি থাকায় দাম একটু কম। তবে এক্ষেত্রে চাষিরা ৩-৬ মাস ঘরোয়া ভাবে ঝুলিয়ে রেখে পেয়াজ সংরক্ষণ করতে পারে। এছাড়াও আমরা আশা করছি আমাদের মেহেরপুরের কৃতিসন্তান জন প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মেহেরপুরে একটি সংরক্ষাণাগার নির্মাণের ব্যবস্থা করবেন। তাহলে চাষিরা যথা সময়ে সেগুলো বিক্রি করে, যথাযথ মূল্য পাবে।