এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে তাদের চ্যাম্পিয়ন হতে টপকাতে হবে আফগানিস্তানের কঠিন বাধা। সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচ জিতলেও আফগানদের বিপক্ষে প্রথম সাক্ষাতে হার দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারাও ফাইনাল নিশ্চিত করেছে টাইগারদের আগেই। সিরিজের শেষ ম্যাচে কাল ফের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। আর শিরোপার লড়াইয়ের আগে রশিদ খানের দলের বিপক্ষে ম্যাচটিকে ফাইনালের মহড়াই বলা যেতে পারে। দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও মনে করেন চ্যাম্পিয়ন হতে হলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন।
শেষ ম্যাচে দলকে জয় এনে দিতে দারুণ ভূমিকা রাখেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বুধবার তার ৪১ বলে করা ৬২ রানের ইনিংসে ভর করেই জিম্বাবুয়েকে ১৭৫ রানের টার্গেট দিতে সক্ষম হয় টাইগাররা। লড়াকু পুঁজি পেয়ে বোলাররাও প্রতিপক্ষকে দারুণভাবে চেপে ধরে দলের জয় নিশ্চিত করে। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেই আফগানদের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছেন না মাহমুদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ভালো করছিলাম না। তাই সবার ভেতরেই ওই স্পৃহা ছিল। সবাই কথা বলেছিল এ নিয়ে। এখন আমাদের লক্ষ্য, আফগানিস্তানের সঙ্গে যেন একই (জিম্বাবুয়ে ম্যাচ) কিংবা আরও ভালো পারফরম্যান্স করে জিততে পারি। এবং ফাইনালের জন্য যেন তৈরি হতে পারি।’
রিয়াদের ব্যাটে রানও দলের জন্য দারুণ স্বস্তির। কারণ দীর্ঘ দিন থেকেই তিনি বাজে সময় কাটাচ্ছিলেন ব্যাট হাতে। ইনজুরির কারণে বলও করতে পারছিলেন না এই অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে বাজে সময় কাটিয়েছেন। এর পর শ্রীলঙ্কা সফরেও খুব খারাপ ছিল তার পাফরম্যান্স। গুঞ্জন শুরু হয়েছিল দল থেকে তার বাদ পড়ার। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে ২৪ ইনিংস পর ফিফটি হাঁকিয়ে দলের জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন তিনি। মূলত এই জয়ে বেড়েছে টাইগারদের আত্মবিশ্বাসও। এই নিয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস তো অবশ্যই থাকবে। ফিল্ডিংয়ে নামার সময় সাকিবের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, সম্ভবত ১০-১৫ রান কম হয়েছে। তারপরও বোলাররা ভালো বোলিং করেছে তাই এ সংগ্রহই বড় মনে হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় পরের ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু র্যাঙ্কিংয়ে তারা ওপরে আছে। তারা আছে ৭ নম্বরে আমরা সম্ভবত ১০ নম্বরে। তাই আমাদের অনেক ভালো খেলতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা যেন আত্মবিশ্বাসটুকু নিয়ে যেতে পারি ফাইনালে।’
২০০৭-এ দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৭৯ ম্যাচ। ৫ থেকে ৭ নাম্বার পজিশনে দলের ব্যাটিংয়ের আস্থা তিনি। এক কথায় দলের ফিনিশিংয়ের দায়িত্ব ছিল অনেকটাই তার কাঁধে। কিন্তু ১১ বছরের ক্যারিয়ারে এই ফরম্যাটে নিজেকে সেইভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। তার ব্যাট থেকে এখন পর্যন্ত ফিফটির সংখ্যা মাত্র ৪টি। ২৪.০৫ গড়ে করেছেন ১৩৭১ রান। তবে দলও যে টি-টোয়েন্টি খুব শক্ত অবস্থানে, তাও নয়। ক্রিকেটের এই ছোট সংস্করণে আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানেরও তিন ধাপ পরে সাত নম্বরে। যদিও ব্যাট হাতে দেশের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তারই। তার উপরে দ্বিতীয় স্থানে সাকিব আল হাসান ৭১ ম্যাচে করেছেন ১৪৯৭ রান। আর ৫৯ রান হলে তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন শীর্ষে থাকা তামিম ইকবালকে। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৮০টি ম্যাচ খেলা মুশফিকুর রহীমের অবস্থান ১১৭৫ রান করে চতুর্থ স্থানে। শুধু তাই নয় দেশের হয়ে এই চারজনই কেবল ছুঁতে পেরেছেন হাজার রানের ল্যান্ডমার্ক। তাই তাদের ব্যর্থ বললেও ভুল হবে। কারণ তরুণ কেউ তাদের জায়গা নিতে পারেননি এখনো। এখানেই স্পষ্ট টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের দুর্বলতা।
মূলত ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, ওয়ার্নার, আফ্রিদির মত মারকুটে ব্যাটসম্যানই নেই বাংলাদেশে। যারা কিনা একাই ঝড় তুলে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন। তাই ম্যাচ জয়ের পরও ব্যাটিং নিয়ে আক্ষেপ ঝরে মাহমুদুল্লাহর কণ্ঠে। তবে এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পথও বাতলে দিয়েছেন তিনি। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা পাওয়ার হিটিংয়ের চেয়ে স্কিল হিটিংয়ে অনেক বেশি পারদর্শী। যখন আমরা সেট থাকি, তখন আমরা আমাদের পাওয়ারটা কাজে লাগাতে পারি। তবে আমরা ক্রিস গেইল কিংবা আন্দ্রে রাসেল নই। আমাদের স্কিল হিটিংয়ের উপরই বেশি ফোকাস থাকে। আমি কয়েকটা ফুলটস বল মিস করেছি। একটাতে আউট হলাম, আরেকটা মিস করেছি। আরও ২-১ জন এমন মিস করেছে। আমার মনে হয় ফুলটস বল মুশফিকই সবচেয়ে বেশি ভালো খেলে। এই জিনিসগুলো হয়তোবা ওয়ার্কআউট করতে হবে, স্কিল হিটিংয়ের চেয়ে পাওয়ার হিটিং কীভাবে আরও বাড়ানো যায়। ব্যাটিং কোচের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলাটা ভালো।’
স্পোর্টস ডেস্ক