২০১৪ সালের শেষ দিকেও মাহমুদউল্লাহর ওজন ছিল ৯০ কেজি। দুই বছরের মধ্যে সেটি নেমে আসে ৭৮ কেজিতে। ফিটনেসে এই যে আমূল পরিবর্তন, এর পেছনে মাহমুদউল্লাহ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে যাঁর অবদানের কথা বলেছিলেন তিনি—মারিও ভিল্লাভারায়েন।
শুধু মাহমুদউল্লাহ নন; তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মুর্তজা থেকে শুরু করে লিটন দাস, সাইফ হাসান—প্রত্যেকের ফিটনেসে উন্নতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে মারিওর। ২০১৪ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ দলের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ হিসেবে যোগ দেওয়া ৪৬ বছর বয়সী শ্রীলঙ্কান ট্রেনার বাংলাদেশ-পর্ব শেষ করতে যাচ্ছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে। বিদেশিদের বাংলাদেশ দলে এত দিন কাজ করার অভিজ্ঞতা কমই আছে।
বাংলাদেশে প্রায় অর্ধযুগ কাটিয়ে দেওয়া মারিওর সবচেয়ে বড় অর্জন, ফিটনেসে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ভীষণ সচেতন করে তোলা। খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে ছুটিতে ফিটনেস নিয়ে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলার পেছনে শ্রীলঙ্কান ট্রেনারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তামিম ইকবালের কথাই ধরুন, বিরিয়ানি খুব প্রিয় খাবার বাঁ হাতি ওপেনারের।
ফিটনেস ধরে রাখতে সেই তামিম কীভাবে বিসর্জন দিয়েছেন প্রিয় খাবারটা, প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলছিলেন মারিও, ‘তামিমকে নিয়ে ভীষণ খুশি। সে দলের অন্যতম ক্রিকেটার যে খুব খেতে ভালোবাসে। এখন সে বোঝে যদি ভালো খেলতে হয়, নিজেকে আরেকটা ধাপে নিতে হয় ডায়েটে পরিবর্তন করতেই হবে। তাকে বলি কী করা দরকার। সে সেটা করে। কাজেই কৃতিত্ব ওকেই দিতে হবে।’
ফিটনেস নিয়ে ভীষণ সচেতন করেছেন ট্রেনার মারিও।
লম্বা সময়ে তো কাজ করলেন, বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে ধারাবাহিক ফিট ক্রিকেটার কে? এ প্রশ্নে অবশ্য অনেক নাম এল মারিওর মুখে। তবে মুশফিকুর রহিমকেই বেশি এগিয়ে রাখলেন তিনি, ‘মুশি থাকবে সবার আগে। ফিটনেসে খুবই ধারাবাহিক সে। তবে বলতেই হয় তরুণ ক্রিকেটার যেমন লিটন অনেক উন্নতি করেছে। এখন নিজেরাই তো ওরা অনেক কাজ করে। কদিন আগে দেখলাম আমার অনুপস্থিতিতেই লিটন নিজের মতো করে রানিং করছে। এটাই আমার সাফল্য। সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান সবাই অনেক উন্নতি করেছে।’
একটা সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ‘বদঅভ্যাস’ ছিল খেলা না থাকলে ফিটনেস নিয়ে উদাসীন থাকা। সিরিজ চলার সময়ে ফিটনেস নিয়ে যে উন্নতিটা হতো, সেটি আবার হারিয়ে যেত ছুটির সময়ে। ছুটিতে ক্রিকেটারদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাটা ছিল মারিওর কাছে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি কীভাবে উতরেছেন, সে গল্পটাও বললেন বাংলাদেশ দলের ট্রেনার, ‘মানসিকতায় তাদের অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের আমি বোঝাই, কেন তারা এটা করছে, এতে কী লাভ। তারা যখন খেলায় ফিরে আসবে, শরীরে তা কতটা প্রভাব ফেলবে।
আমি বলি না যে মায়ের হাতের রান্না খেয়ো না। তুমি যখন বাড়ি যাও, মা তোমার জন্য খাবার রাঁধবে—তুমি বলতে পারবে না যে মা, খাব না। উপমহাদেশের সংস্কৃতি আমি জানি। আমিও এই পরিস্থিতি কাটিয়ে এসেছি। মা যখন ভীষণ কষ্ট করে আপনার জন্য রাঁধবে, সেটা খাবেনই। না হলে মা কষ্ট পাবে। তবে সেই খাবারের পর ফিটনেস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করাটাও জানতে হবে।’
মারিওর কৃতিত্ব এখানেই, ফিটনেস নিয়ে তিনি শুধু পথ দেখিয়ে দেননি, বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের সেই পথে হাঁটতেও শিখিয়েছেন। শ্রীলঙ্কান ট্রেনার তাই হাসিমুখেই যেতে পারছেন বাংলাদেশ থেকে। তাঁর আশা, সামনেও এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখবেন ক্রিকেটাররা।