আমাদের শরীরের একটি অন্যতম অঙ্গ হচ্ছে ফুসফুস। এটির মাধ্যমেই আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকি। কিন্তু এ অঙ্গটি প্রতিনিয়তই বাতাস থেকে বিভিন্ন দূষিত উপাদান গ্রহণ করে চলে।
বিশেষ করে যারা ধূমপান করেন এবং বেশি ধুলাবালি যুক্ত রাস্তায় বা স্থানে চলাচল করেন, তাদের ফুসফুস আরও বেশি দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এর কারণে অনেক সময় হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ এবং সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তাই এ ঝুঁকি এড়াতে আমাদের ফুসফুসকে যতটা সম্ভব সুরক্ষিত ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
আর শরীরের বাকি অংশকে সুস্থ রাখার জন্য ফুসফুসের স্বাস্থ্য বজায় রাখাও অপরিহার্য। তাই আজ জানুন যে ছয় উপায়ে পরিষ্কার রাখতে পারবেন ফুসফুস—
১. বাষ্প থেরাপি
বাষ্প থেরাপি বা বাষ্প নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে সেটি ফুসফুসকে শ্লেষ্মা নিষ্কাশন করতে সাহায্য করে। অনেক সময় ফুসফুসের সমস্যার কারণে বা ঠাণ্ডা অথবা শুষ্ক বাতাসে ফুসফুসের শ্লেষ্মা ঝিল্লি শুকিয়ে যেতে এবং তা রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে।
আর বাষ্প বাতাস নিলে তা ফুসফুসে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা যোগ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি করতে পারে এবং শ্বাসনালি ও ফুসফুসের ভেতরে শ্লেষ্মা আলগা করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি শ্বাস নিতে তাৎক্ষণিক স্বস্তি প্রদান করতে পারে।
২. কাশি
শুনতে একটু অবাক লাগলেও কাশি আপনার ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করতে পারে। শরীরের প্রাকৃতিকভাবে শ্লেষ্মা আটকে থাকা টক্সিনগুলোকে বের করে দেওয়ার উপায় হচ্ছে কাশি। আর নিয়ন্ত্রিত কাশি ফুসফুসে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা ঢিলা করে এবং তা শ্বাসনালি দিয়ে ওপরে বের করে দেয়।
৩. নিঃশ্বাসের ব্যায়াম
নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করেও ফুসফুসকে অনেকটা পরিষ্কার করতে পারা যায়। এর জন্য আপনাকে সোজা হয়ে শুয়ে এবং কোমরের নিচের দিকে বালিশ নিতে হবে, যাতে বুক একটু নিচের দিকে থাকে। পরে ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে ও মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শ্বাস ছাড়তে শ্বাস নেওয়ার চেয়ে দ্বিগুণ সময় নেওয়া উচিত।
৪. ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং এটি স্ট্রোক, হৃদরোগসহ অনেক স্বাস্থ্য অবস্থার ঝুঁকি হ্রাস করে।
এ ছাড়া ব্যায়াম শরীরের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়িয়ে দিয়ে পেশিগুলোকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করে। ফলে পেশিগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ বেশি হয়।
৫. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আর এ যৌগগুলো ফুসফুসের টিস্যুকে ধোঁয়া ইনহেলেশনের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকেও রক্ষা করতে পারে।
৬. প্রদাহ বিরোধী খাবার
শ্বাসনালিতে প্রদাহ হলে তা শ্বাস-প্রশ্বাসকে কঠিন করে তুলে বুক ভারি ভাব এবং জমাট বোধ করার মতো সমস্যা করাতে পারে। আর এটি প্রকৃতিকভাবে দূর করতে প্রদাহবিরোধী খাবার খাওয়া অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্য প্রদাহবিরোধী খাবার হিসেবে হলুদ, বিভিন্ন শাক, চেরি ফল, ব্লুবেরি, জলপাই, আখরোট, মটরশুটি, মসুর ডাল ইত্যাদি খেতে পারেন।
তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে ডটকম