ফেসবুকে হতাশাব্যঞ্জক স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ইমরান আহমেদ (৩৮) নামে চুয়াডাঙ্গার এক যুবক। বুধবার সন্ধ্যারাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। একই দিন সকালে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশাব্যঞ্জক স্ট্যাটাস দেন। রাতেই ঘরের দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ইমরান আহমেদ চুয়াডাঙ্গা শহরের সিঅ্যান্ডবিপাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজি নাসির উদ্দিনের বড় ছেলে।
জানা গেছে, বুধবার সকালে ইমরান আহমেদ নিজের ফেসবুক আইডিতে হতাশাব্যঞ্জক একটি স্ট্যাটাস দেন। পাঠকের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘এগুলো আমি কেন লিখছি জানি না। জীবনে আসলে অনেক কিছুই শেখার বাকি, যখন চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে তখন আমাদের মনে হয় এক টুকরো ছোট্ট আলো হলে হয়তো চালিয়ে নিতে পারতাম। আবার যখন অনেক আলো থাকে তখন মনে হয় এতো আলো কেন! একটু অন্ধকার হলেই ভালো হতো! কিছু মানুষ আছে যাদেরকে হাজারো আঘাত করলে মনে কষ্ট পায় না, অথচ ছোট্ট কোনো কষ্ট তার মনটাকে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়। মানুষের মধ্যে একটা জিনিস থাকে যেটাকে সে খুব ভালোবাসে, সেটা তার পার্সোনালিটি অথবা ইগো।
এটা মানুষভেদে নির্ভর করে কে কোনটাকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে। পার্সোনালি আমার কাছে ইগোর থেকে পার্সোনালিটিটা বেশি মূল্যবান। এই জায়গাটায় আমি কোনোভাবে কম্প্রোমাইজ করতে পারি না। প্রত্যেকটা মানুষ দোষ-গুণের তৈরি। মানুষের মধ্যে যে শুধু দোষই থাকবে বা গুণই থাকবে তা কিন্তু নয়। যেমন শুধু খাঁটি সোনা দিয়ে গহনা তৈরি করা সম্ভব না, তাতে খাদ মেশানোর প্রয়োজন হয়। তেমনি প্রতিটা মানুষের মধ্যেই দোষ এবং গুণ দুটোই বিরাজমান। কিছু সময় আসে যখন মানুষ তার নিজের ভালো-মন্দের কথা কাউকে শেয়ার করতে পারে না, আবার শেয়ার করলেও তাদেরকে বোঝানো সম্ভব হয় না। ওই সময়টাই ওই মানুষটার মধ্যে যে অসহায়ত্ত বোধ হয়, সেটা আমার মনে হয় পৃথিবীর কোনো ভাষা দিয়ে কাউকে বোঝানো সম্ভব না। একমাত্র মৃত্যুর মিছিলে সামিল হলে বোঝানো সম্ভব হয়।’
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের ডা. আউলিয়ার রহমান বলেন, ‘একটি মাধ্যমে খবর পেয়ে ইমরান আহমেদের বাড়িতে যাই। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ইমরান আহমেদকে মৃত ঘোষণা করি। তবে কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সঠিক জানি না।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ খান বলেন, ‘সন্ধ্যায় খবর পেয়ে ইমরান আহমেদের ঘরের দরজা ভেঙে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তদন্তে জানা গেছে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ, পরকীয়ার আসক্তি ও বেশ কিছুদিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন ইমরান। এ ঘটনায় নিহত ইমরানের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়।’