বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে অর্থবিল-২০২০। প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থ-বছরের বাজেটে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি, তাই অর্থ বিলেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই প্রথম প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো রকম পরিবর্তনের ঘোষণা না দিয়েই অর্থ বিল জাতীয় সংসদে পাসের জন্য অনুরোধ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সোমবার জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অর্থ বিল-২০২০ জাতীয় সংসদে পাসের জন্য ভোটে দিলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। সকালে সংসদের মুলতবি অধিবেশন শুরু হলে সরকারি ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা বাজেটের ওপর আলোচনা করেন। পরবর্তীসময়ে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন।
এর আগে জাতীয় সংসদের সরকারি ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা অর্থ বিলের বিভিন্ন অংশের সংশোধনী প্রস্তাব এনে বক্তব্য রাখেন।
সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশিদ, মুজিবুল হক, আবুল হাছান মাহমুদ আলী, আলী আশরাফ, মশিউর রহমান রাঙার অর্থ বিলের ওপর আনা কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী।
মঙ্গলবার ২০২০-২১ অর্থ-বছরের বাজেট পাস হবে। এবং ১ জুলাই বুধবার থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যরা অনেক স্ট্যাডি করে অর্থ বিল-২০২০ এর উপর বিভিন্ন সংশোধনী এনেছেন। আমি তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। যে সংশোধনীগুলো গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো হলো- সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান অর্থ বিলের দফা-৮, ১৬ এবং ৫৪ এর সংশোধনী প্রস্তাব। সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ অর্থবিলের দফা- ৮, ১৬, ১৮, ৫৪ এর সব সংশোধনী প্রস্তাব।
এছাড়া সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক অর্থ বিলের দফা-১৭, ১৮, ৩৯, ৪৩ এবং তফসিল ২ এ যে সব সংশোধনী প্রস্তাব। সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলীর অর্থ বিলের দফা-১৮ এবং ৫১। সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ অর্থ বিলের দফা-৫৪, ৬২, ৭০, ৭১ এবং সংসদ সদস্য মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা অর্থ বিলের দফা-১৫, ৭৩, ৭৬, ৮০, ৮১ তে যে সব সংশোধনী এনেছেন সেগুলো গ্রহণ করেছি। পরবর্তীসময়ে এগুলো ভোটে দিলে তাও কণ্ঠভোটে পাস হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে সারা বিশ্ব একটি ক্রান্তিকাল পার করছে যেখান থেকে আমরাও পরিত্রাণ পাইনি। পৃথিবীর অর্থনৈতিক এলাকায় সময়টি একটি অস্বাভাবিক সময়। স্বাভাবিক সময় হলে আমরা সদস্যদের প্রস্তাবনার অনেক কিছু বিবেচনা করতে পারতাম। কিন্তু এবারের পরিস্থিতির সার্বিক বিবেচেনায় সদস্যদের আনা বাকি সংশোধনী প্রস্তাবগুলি গ্রহণ করতে পারলাম না বলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এবারের বাজেট মানুষের জন্য, তাই সব জেনেশুনেই আমরা কঠিনকে ভালোবেসেছি। আমরা বিশ্বাস করি এবারের বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন কিছু নয়। অতীতের সব বাজেটই বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এবারের বাজেটও সরকার বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।
গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থ-বছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন- জিডিপিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে ২০২০-২১ অর্থ-বছরের জন্য রেকর্ড জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ। রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ।