মানুষের ত্বক উজ্জ্বল করার পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ায় বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েও কপটতার অভিযোগ শুনতে হয়েছে বেশ কয়েকজন বডিউড অভিনেত্রীকে।
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড পুলিশের হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর প্রিয়াংকা চোপড়াসহ এসব অভিনেত্রী সামাজিকমাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।-খবর ডনের
৩৭ বছর বয়সী প্রিয়াংকা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সর্বত্র এই বর্ণপ্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। ত্বকের রঙের জন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করার অধিকার কেউ রাখেন না।
তার এ বক্তব্যের পর সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারীরাও তাকে কটূক্তি করতে ছাড়েননি। এর আগে রঙ ফর্সাকারী ময়েশ্চারাইজারের বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তিনি।
এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী বলেন, কালো মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু আপনাকে ত্বক ফর্সা করার ক্রিমে সমর্থন দেয়াও বন্ধ রাখতে হবে। কারণ তা কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী।
বলিউড ও হলিউড– দুই জায়গায়ই অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছেন সাবেক মিস ওয়ার্ল্ড প্রিয়াংকা চোপড়া। এর আগে তিনি বলেন, তরুণ অভিনেত্রী হিসেবে এসব পণ্যের বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়ে আমি অনুতপ্ত। নিজের কালো ত্বকের জন্য গর্ববোধের কথাও জানিয়েছেন এই ভারতীয় নায়িকা।
সামাজিকমাধ্যমে বর্ণবাদবিরোধী পোস্টের পর প্রিয়াংকা ছাড়াও সমালোচনার মুখে পড়েছেন সোনম কাপুর, দীপিকা পাড়ুকন ও দিশা পাতানি। কারণ তারা সবাই ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন।
ভারতের শত শত কোটি ডলারের ত্বক উজ্জ্বল করার কারখানা রয়েছে। যাতে কালো বর্ণের ভারতীয়দের ত্বক ফর্সা করতে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে তারা যে ত্বক পেয়েছেন, তা আরও উজ্জ্বল ও সুন্দর করার প্রস্তাব রয়েছে এসব পণ্যে।
যাতে অনুমোদন দিতে দেখা গেছে ভারতীয় প্রথম সারির অভিনেত্রীদের। বছরের পর বছর ধরে এসব পণ্যের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও প্রচার চলছে।
শেষ পর্যন্ত ব্র্যান্ডগুলো তাদের পণ্যের নাম বদল করেছে। কেউ নাম দিয়েছে ফেসওয়াশ, কেউবা বলছে– ত্বক উজ্জ্বল করার ক্রিম। অভিনেতা আভি দেওয়াল বলেন, এখন আর ‘ত্বক ফর্সাকারী’ পরিভাষাটি ব্যবহার করতে চাচ্ছে না অধিকাংশ ব্র্যান্ড।
সমালোচকদের অভিযোগ, কালো বর্ণের মুখমণ্ডলের চেয়ে ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বকের প্রতি ভারতীয়দের ঝোঁককে কাজে লাগাতে ব্র্যান্ডগুলোকে সহায়তা করছে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প।
উদহারণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অধিকাংশ লোক কালো। সেখানকার অভিনেতাদের বলিউডের মূলধারার চলচ্চিত্রে অংশ নেয়ার ঘটনা বিরল।
ত্বকের কারণে বৈষম্যের শিকার হওয়া এক নারীর গল্প নিয়ে গত বছর ‘বালা’ নামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। যাতে মূল ভূমিকায় অংশ নেয়া অভিনেত্রী ভূমি পেডনেকারকে তার ত্বক কালো করতে হয়েছে।
সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, ভারতীয় চলচ্চিত্রের গান ও সংলাপে কেবল সৌন্দর্য এবং ফর্সার কথাই বেশি বলা হচ্ছে।
রঙ ফর্সাকারী পণ্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন আরেক অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত।
গত সপ্তাহে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারতীয় সেলিব্রেটিরা সব ধরনের রঙ ফর্সাকারী পণ্যে সমর্থন দিচ্ছেন। এখন নির্লজ্জভাবে তারা কালো মানুষের অধিকারের আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন। তারা এটি কীভাবে করেন? সূত্র-যুগান্তর