ডেভন কনওয়ের উইকেট পাওয়ার পর মমিনুল হকের হাসি যতটা আনন্দের, তার চেয়ে বেশি বিস্ময়ের। ওরকম নির্বিষ বলে একজন সেঞ্চুরিয়ানের উইকেট কালেভদ্রে পাওয়া যায়। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রথম দিনের খেলার পর হতাশা ব্যক্ত করেছেন কনওয়েও, ‘লম্বা ইনিংস খেলার পর খণ্ডকালীন বোলারকে কেউ উইকেট দিতে চায় না।
অবশ্য এই উইকেটটি পরোক্ষে বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পুরস্কার বলেও ধরে নেওয়া যায়। দিনশেষে ৫ উইকেটে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ২৫৮—এই তথ্যটিই বলে দেয় যে অনভ্যস্ত কন্ডিশনে বোলিং পরীক্ষায় উতরে গেছেন শরিফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদরা।
নিউজিল্যান্ডের অন্য প্রান্তের তুলনায় মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের উইকেট কম সবুজাভ। এর পরও উইকেট তো সুইংয়ের দেশেরই। সমুদ্রতীরের শহরটি আবহাওয়ার কারণে পর্যটকপ্রিয় হলেও সকালের উইকেট পেসারদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে রাখে। তাই দুই অধিনায়কই টস জিতে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের প্রথম ঘণ্টার পরীক্ষায় ফেলার অপেক্ষায় ছিলেন। টস জিতে তাই ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মমিনুল।
তবে সহায়ক কন্ডিশন অপচয় করার অজস্র উদাহরণ আছে বাংলাদেশি পেসারদের। কিন্তু গতকাল তাসকিনের নেতৃত্বে সঠিক পথেই হেঁটেছে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ। ভাবা যায়, প্রথম ঘণ্টায় ১৩ ওভারে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে মাত্র ১৫ রান উঠেছিল! এর মধ্যে কেন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম লাথামের উইকেটও খুইয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা শরিফুল নিজের দ্বিতীয় ওভারেই তুলে নেন লাথামকে।
দুই দিক থেকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং হওয়ায় আরেক ওপেনার উইল ইয়াং ও তিন নম্বরে খেলতে নামা কনওয়ে রয়েসয়েই খেলেছেন। প্রথম সেশনে রান ওঠে ৬৬, ১ উইকেটে। প্রথম পরিবর্তনে এবাদত আক্রমণে আসার পর কিছুটা হাত খুলে খেলতে শুরু করেন ইয়াং ও কনওয়ে।
তবু রানের ঘোড়া ছোটাতে পারেনি স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় সেশনে ফিফটি করে ইয়াং রান আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন এই সিরিজের পর টেস্ট থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাখা রস টেলর। তাঁর বিদায়ি সিরিজের শুরুটা রঙিন হতে দেননি শরিফুল।
বিরতি দিয়ে উইকেট পাওয়ার আনন্দে তখনো কাঁটা হয়ে বিঁধে ডেভন কনওয়ে। এই জুনে লর্ডসে ডাবল সেঞ্চুরি দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করা বাঁহাতি ব্যাটার যে আরেকবার তিন অঙ্কের ল্যান্ডমার্ক পেরিয়ে গেছেন! তাসকিন দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। শরিফুলের বলও ফাঁকি দিয়েছে কনওয়ের ব্যাট। কিন্তু তাঁর মহামূল্য উইকেট তোলা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আক্রমণে আসেন মমিনুল, অভাবিত সাফল্যও পেয়ে যান।
দিনের শেষ ভাগে কনওয়ের বিদায়ের কিছু পর টম ব্লান্ডেলকে ফিরিয়ে দেন এবাদত, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন মনে করছেন, ‘লড়াই থামাইনি। প্রথম ঘণ্টায় দুর্দান্ত বোলিং করেছি। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। ভাগ্য পক্ষে থাকলে আরো উইকেট পেতে পারতাম। ডেভন কনওয়ে ভালো খেলেছে। দিনশেষে ৫ উইকেটে ২৫০ রান (২৫৮), আমি মনে করি দুই দলের অবস্থান সমান-সমান।’
আর দুটি নতুন বলে শিষ্যদের বোলিং দেখে গর্বিত এই ক্যারিবীয়, ‘অচেনা কন্ডিশনেও পেসাররা ভালো বোলিং করেছে, বিশেষ করে সকালে। ওপরে বোলিং করেছে, সুইং করিয়েছে, ব্যাটারকে চমকে দিয়েছে। সব মিলিয়ে বলব, ফাস্ট বোলাররা অনেক চেষ্টা করেছে।
৫৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে দিনের সফলতম বোলার শরিফুল ইসলামের মনেও সন্তুষ্টির পাশাপাশি কিছু অতৃপ্তিও আছে, ‘পারফরম্যান্সে খুশি। তবে মনের মধ্যে কিন্তু শব্দটা থাকেই। যদিও আরো একটা-দুইটা উইকেট যেত, তাহলে আরেকটু খুশি লাগত, তবে দিনশেষে খুশি।’ আজকের দিনটিও এমন খুশির হবে তো বাংলাদেশের জন্য?