দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন থাকায় একসময় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী-কাজিপুর আঞ্চলিক সড়কটি। ভাঙ্গাচোরা সড়কটি পরবর্তীতে গেল বছরে নতুন করে সংস্কার কাজের অনুমোদন হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারীতে কাজের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও সড়কটির শতভাগ কাজ এখনো অসম্পূর্ণ।
সড়কটির নিশিপুর অংশ থেকে হাড়াভাঙ্গা মাদ্রাসা বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৪কি.মি. এলাকা জুড়ে বালি আর ইটের খোয়া দিয়ে ডলা হলেও মাসের পর মাস পেরিয়েছে তবুও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্পেটিং কাজ শুরু করেনি এখনো। যার ফলে সড়কটিতে ইটের খোয়ার লাল রঙের ধুলোবালি উড়ে সীমাহীন সমস্যার মধ্যে রয়েছে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
কার্পেটিং না হওয়ার কারণে ধুলোবালি উড়ে সড়কের চলাচলে এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বিঘ্নতা ঘটাচ্ছে। সড়কটিতে চলাচলকারী পথচারীরা এবং বামন্দী-নিশিপুর থেকে হাড়াভাঙ্গা পর্যন্ত বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দাদের যেন বেদনার শেষ নেই। ধুলোবালি উড়ার ফলে বিভিন্ন রোগব্যাধি জন্মানোর আশঙ্কা করছেন তারা। এ সড়কের ধুলোবালি কয়েক লক্ষ মানুষের কাছে এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রচন্ড ধুলাবালির কারণে স্থানীয়রা মটরের পানি দিয়ে রাস্তা ভেজাচ্ছে বিগত কয়েক মাস ধরে। ধুলোবালিতে গাছগাছালি বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে। এ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক চালকেরা প্রায় দিশাহীন হয়ে উঠেছে। কার্পেটিং কাজ না হওয়ার ফলে সড়কটির পাশে অবস্থিত বেশকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
বালিয়াঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন বলেন, আমাদের স্কুলের পাশের সড়কটিতে ইটের খোয়া দিয়ে ডলা হলেও কার্পেটিং কাজ হয়নি। যার ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
হাড়াভাঙ্গা ডি এইচ সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ধুলোবালিতে এত পরিমাণ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে; যা ভাষায় প্রকাশের মতো না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি কার্পেটিং সহ সংস্কার চাই।
বালিয়াঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিতু খাতুন বলেন, রাস্তায় ধুলোবালির কারণে আমাদের স্কুলে আসতে খুব সমস্যা হয়। স্কুলড্রেস নোংরা হয়ে যায় ধুলোবালিতে।
এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বায়েজিদ হোসেন বলেন, স্কুলে যেতে এবং বাড়ি ফিরতে প্রতিদিন ধুলোবালি অতিক্রম করতে হয়; স্কুলে যাওয়ার পথে সাদা স্কুলড্রেস লাল বালিতে লালচে আঁকার ধারণ করে।
সড়কটিতে চলাচলকৃত পথচারী কামাল হোসেন বলেন, ঠিকাদার কাজ না করে ফেলে রাখার কারণে চরম সমস্যার মধ্যে রয়েছি; পেটের মধ্যে ধুলোবালি ঢুকে অসুখ বিসুখ হচ্ছে।
সড়কটিতে চলাচলকারী আরেক পথচারী জাহিদ হাসান বাদল জানান, আমি প্রতিদিন ব্যবসার সূত্রে নতুন ব্রজপুর থেকে বামন্দী যায়। কার্পেটিং না হওয়ায় প্রচন্ড সমস্যা হচ্ছে; রাস্তার কাজ না করায় ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের শাস্তি হওয়া দরকার। বারবার শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কাজ শুরু হচ্ছে না।
বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও বালিয়াঘাট গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, ধুলোবালি উড়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কয়েকলক্ষ মানুষকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্পেটিং কাজ শুরু করা প্রয়োজন।
গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন আশ্বাস দিয়ে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজকে অনুরোধ করা হয়েছে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য। বামন্দী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে পাথর, বালু নিয়ে এসেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু হবে।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক কতদিন নাগাদ কার্পেটিং কাজ শুরু করবে সেবিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সঠিক জবাব পাওয়া যায়নি।