পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ডাকা লাগাতার ধর্মঘটে অনেকটাই বাসশূন্য রাজধানীর সড়ক। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে বাস না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী সাধারণ। বিশেষ করে চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। আজ ১৯ টি প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাত্রীবাহী বাস নেই কোথাও। যাও দু’একটি বিআরটিসির বাস অনেকক্ষণ পর পর আসছে তাতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এক দুই ঘণ্টা পর একটি বিআরটিসি বাসের দেখা মিললে তাতে উঠার জন্য যাত্রীদের কী প্রতিযোগিতা!
রাজধানীর খিলক্ষেতে কথা হয় রুবেল নামে এক তরুণের সঙ্গে। তিনি জানান, বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা। সিট পড়েছে নিউমার্কেট এলাকায়। ঘণ্টাখানেক ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু কোনো বাস পাচ্ছেন না। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চাচ্ছে ৩ গুন ভাড়া। পকেটে এত টাকাও নেই। হেঁটেই পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন রুবেল।
উত্তরার জসীমউদ্দিন রোডে কথা হয় সুফিয়া আক্তার নামে এক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবেন। আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও সড়কে কোনো গাড়ি পাননি। বাধ্য হয়ে চারগুণ ভাড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে ছুটছেন।
আবদুল্লাহপুর স্ট্যান্ডে কথা হয় রুহুল আমিন নামে এক যুবকের সঙ্গে। তিনি জানান, বিকালে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা। সিট পড়েছে ধানমন্ডির একটি কেন্দ্রে। বাস বন্ধ থাকবে এমন সম্ভাবনার কথা গতকাল গণমাধ্যমে জেনে সকালেই রওনা হয়েছেন পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বাস না পেলে পায়ে হেঁটেই যেতে হবে।
একদিনে ১৯ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা আজ। একই দিনে এতগুলো প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা থাকায় বিপাকে পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। কারণ তাদের অনেকেই একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন।
আজ সকাল, দুপুর ও বিকাল— ১৯ প্রতিষ্ঠানে এসব পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা।
এতে কোনটি রেখে কোনটিতে অংশ নেবেন, তা নিয়েই চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। অনেকেই কষ্টের টাকায় আবেদন করেছেন। কিন্তু একাধিক পরীক্ষা একই সময়ে হওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারছেন না। প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। স্বপ্নভঙ্গ ও অর্থের অপচয় হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের আক্ষেপের শেষ নেই।
আজ যে ১৯টি প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় ও সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে— স্থানীয় সরকার বিভাগ, কর কমিশনারের কার্যালয়, কর অঞ্চল-১৪, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা, বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, শ্রম আদালত সিলেট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, খাদ্য অধিদপ্তর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, সমন্বিত সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের তিনটি পদের ব্যবহারিক বাদে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। খাদ্য অধিদপ্তরে পরীক্ষা হবে দেশের আট বিভাগীয় শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ)।
শ্রম আদালত সিলেটের পরীক্ষা হবে সিলেটে। পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়ার পরীক্ষা হবে বগুড়ায়। আর বাকি সব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা ঢাকায় হবে।
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় কথা হয় গাইবান্ধা থেকে চাকরি পরীক্ষা দিতে আসা এক চাকরি প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ এবং আগামীকাল আমার চাকরির পরীক্ষা আছে। গাইবান্ধা থাকে সারা রাত ভ্রমণ করে ঢাকায় পৌঁছাই। নামার পর থেকে কোনো বাস নেই। শুধু আছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিন্তু ভাড়া অনেক বেশি। আমার মতো অসংখ্য পরীক্ষার্থী আজ ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।