সরকার পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে গণমিছিল করেছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ের কথা বললেও বিএনপি প্রায়শ একটা দুটো দাবি লেজ আকারে জুড়ে দিচ্ছে। বিএনপির সব নেতার সাথে বসে সিদ্ধান্ত না নিয়ে হুট করে নতুন দাবি তোলা দলটির অভ্যন্তরীণ মন কাষাকষির কারণে হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই ঢাকার চার প্রবেশমুখে বিএনপির সমন্বয়হীন অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে বারবার নিজেদের মধ্যে কথা হচ্ছে। ২৮ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে হুট করে ঘোষণা করে দেওয়া হয় এই কর্মসূচি। এই আন্দোলন নিয়ে আগাম কোনো আলাপ আলোচনা যুগপৎ এর মধ্যে হয়নি। এধরনের সমন্বয়হীনতার বিষয় বিএনপির নেতারা বারবারই করছেন। যুগপৎ এর নেতারা বলছেন, বিএনপি এরকম করছে এবং সামনের দিনে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া শরিক দলগুলোর কোনো কোনোটির কাছ থেকে ভবিষ্যতে আন্দোলনের বিশেষ মুহূর্তে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ শরিকদের যুক্ত করা বা সময়মতো অবহিত করার পরামর্শ এসেছে।
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যায় বিএনপিসহ ৩৬ রাজনৈতিক দল। গত জুলাই মাসে এসব দলে যারা যুক্ত হয় তাদের অধিকাংশ বিএনপির সমমনা দল। যুক্ত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য। এর পরেই এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সেসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিগগিরই আমরা এক দফা আন্দোলন শুরু করব। অর্থাৎ বিএনপির ১০ দফা ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দফাগুলো মিলিয়ে এক দফা করা হয়েছে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন কমিশনের অধীনে নির্বাচন। এখন এসব দাবি নিয়ে একটা জায়গায় আমরা এসেছি। সেটা মূলতই এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবি’।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, যদি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একদফা দাবিতেই লাগে তাহলে বিএনপি একেক সময় একেকটি দাবি যুগপৎ এর কর্মসূচিতে কীভাবে যুক্ত করে? যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “আমরা এখন যারা যুগপৎ আন্দোলনে আছি তারা লিয়াজো কমিটির মাধ্যমে কাজ করছি। বিক্ষোভ, অবরোধ, ঘেরাও ও হরতালসহ সব কর্মসূচিই আমাদের বিবেচনায় আছে। আমাদের দাবি একটা। এর সাথে পৃথক দাবি যার যার দলের থাকতে পারে। যুগপৎ কর্মসূচির বাইরেও আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি থাকবে।” যদিও বিএনপি নেতা রিজভী বারবারই যুগপৎ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে একাধিক দাবি ঘোষণা দিয়ে দেন।
আরেকটি বিষয়েও যুগপৎ এর সঙ্গে তথ্যগত লুকোচুরি করছে বিএনপি। যুগপৎকে না জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর এক সিনিয়র নেতা জানান, ‘আমরা সাথে আছি বলছি না। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চূড়ান্ত আন্দোলনে নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সবগুলো দল নামনে তখন আমরাও মাঠে থাকবো।