বিএনপি-জামায়াত হরতাল, অবরোধ দিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা গণতন্ত্রের রাজনীতি করে না, সংবিধানের ওপর আস্থা নেই। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তাদের এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান এসেছে গৌরব’৭১ ও স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরামের আ্রলোচনা সভায়।
আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘হরতাল-অবরোধ আর আগুন সন্ত্রাস: বন্ধ হোক এই অপরাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেন, ‘বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়ে, চোরাগোপ্তা হামলা করে দেশের রাষ্ট্রীয় কাজ থামানো যাবে না। এগুলো কোনো রাজনৈতিক কর্র্মসূচি নয়; এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তারা ভেবেছে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে সম্পত্তি ধ্বংস করে বোধহয় নির্বাচন বানচাল করা যাবে। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। নির্বাচন বানচাল করা যাবে না।’
হানিফ বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ১৮৬টি বাস-ট্রাক আগুন পুড়িয়েছে। রাজনীতির সাথে এই আগুনের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের কাজ, এটা কিভাবে গণতন্ত্র হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সমমনা কিছু দল আছে, নাম সর্বস্ব দল। তাদের নেতারা টকশোতে এসে ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেন এটা বিএনপি নেতাকর্মী করেনি। সরকারের ওপরই দোষ চাপাতে চায়। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকে। যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে আবার এদের পক্ষে আবার সাফাই করা হয়। এটি জাতীর জন্য লজ্জা।’
সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্রের রাজনীতি করে না। এই দল সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নিয়ে। তারা মানুষকে ভালোবাসে না, সংবিধানের প্রতি আনুগত্য নেই। এই স্বাধীনতা তারা চায়নি। যার কারণে স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন হয়েছে তা তারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, ‘২৩ দিনে অবরোধের নামে ১৮৬টি গাড়ি পুড়ানো হয়েছে। যারা নির্বাচনে আসতে চায় না, তারাই এসব পুড়িয়েছে। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়, দেশকে অশান্ত করতে চায়। তাদের অবৈধভাবে জন্ম হয়েছে আর এজন্য তারা অবৈধভাবেই ক্ষমতায় আসতে চায়।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘হরতাল, অবরোধ ডাকার অধিকার প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আছে কিন্তু মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বাসে আগুন দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না, এগুলো সন্ত্রাসী কর্মসূচি।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি মানিক লাল ঘোষ বলেন, ‘যখনই নির্বাচন আসে তখনি নাশকতা চালানো হয়। গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ এগিয়ে যেতে চায় তখনই সেই অগ্রযাত্রাকে দাবিয়ে দেয়ার জন্য তাদের অপচেষ্টা শুরু হয়। যারা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে সাধারণ মানুষর ক্ষতি করতে চায়, আসুন সবাই মিলে তাদের প্রতিহত করি।’
আলোচনা সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গৌরব ’৭১ সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন। তিনি বলেন, আমরা বাসে চড়ে অফিসে কিংবা বাসায় নিরাপদে পৌঁছাতে চাই। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের বাস আগুন দেয়ার ঘটনায় আজ মানুষ শঙ্কা নিয়ে গাড়িতে ওঠে। আমরা তাদের অবরোধের আগুনে ঝলসে যেতে চাই না।’
সভা সঞ্চালনা করেন স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরাম নেতা ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম।
আলোচনা সভার শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে দেওয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ১০ জন বাস মালিক ও শ্রমিক নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
এর মধ্যে বোরাক পরিবহনের চালক মিরাজ হোসেন বলেন, ‘রাত ১০ টার দিকে আমরা গাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। গাড়ি পুরা কঙ্কাল হয়ে গেছে। একেবারে শেষ হয়ে গেছি। এমনভাবে পুড়েছে ঠিক করাও যাচ্ছে না। আমি খুব নিঃস্ব, অসহায়।’
শিকড় পরিবহনের মালিক লিটন মিয়া বলেন, ‘মিরপুর ১১ পার হওয়ার পর আমার গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। তারা যাত্রীবেশে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। গাড়ির সবকিছুই পুড়ে গেছে। আমার ইনকাম সোর্স বন্ধ হয়ে গেছে।’
অছিম পরিবহনের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমার দুইটা স্টাফ গাড়ির ভেতর ছিল। দুই মিনিটে গাড়িটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন মরে কয়লা হয়ে গেছে। আরেকজন ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের পরিবারের অবস্থাও খারাপ।’