দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপির অনশনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে খাওয়া দাওয়া। একদিকে নেতারা দলের নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে অনশন করছেন, অন্যদিকে নেতাকর্মীরা আশপাশের গলিতে খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা মাস্তিতে ব্যস্ত ছিলেন। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানোর দাবিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হয়ে অনশন চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই অনশন কর্মসূচি আহবান করা হয়েছিল।
অনশন স্থলে গিয়ে দেখা গেছে, নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেই মঞ্চে ছিলেন দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, রহুল কবীর রিজভী, সেলিমা রহমানসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা। খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মঞ্চের সামনের সড়কে মাদুর বিছিয়ে বসেছিলেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
মঞ্চের সামনে যতো না নেতাকর্মী অনশন করছেন তার চেয়ে অনেক বেশি নেতাকর্মী বিএনপির নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের আশপাশের গলিতে চা-নাস্তা আর আড্ডায় ব্যস্ত। এমন দৃশ্য দেখে অনেকিই বলতে শোনা গেছে, “হ্যাঁ , এরা করবে আন্দোলন। ৩ ঘণ্টার অনশনে আইসা শুধু খাই খাই করতেছে। নেত্রীর জন্য ৩ ঘণ্টা না খেয়ে তাকতে পারল না।’
মহানগর উত্তর বিএনপির কর্মী সাগর বলন, ‘দেখেন এই ৩ ঘণ্টার অনশনে কোনে কিছুই হবে না। আমি এসেছি, কর্মসূচিতে আসতে হবে এ জন্য। এসব আন্দোলন দিয়া নেত্রীকেও মুক্ত করা যাবে না আর সরকারেরও পতন ঘটবে না।’ মহানগর উত্তর বিএনপির আরেক কর্মী মোহাম্মদ আজমল হোসেন বলেন, ‘নেতাদেরই যেখানে ঠিক নাই, সেখানে কর্মীদের দোষ দিয়ে লাভ কি?’ অনশন কর্মসূচীতে যোগ দিতে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আসা বিএনপি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনশনস্থলেই ছিলোম। ভাবলাম একটু চা-পানি খাই, তাই গলিতে ঢুকে খাচ্ছি।’
এদিকে বিএনপির এই অনশন কর্মসূচি ঘিরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কর্মসূচির শুরুতেই নয়া পল্টনের সড়কের এক পাশে যানচালাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে এই গণ অনশনে আসতে থাকেন এবং কার্যালয়ের সামসনে পৌঁছানোর পর কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত রাস্তার এক পাশের সড়কে বসে পড়েন। এর ফলে এক পাশের সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল কর গিয়ে নয়াপল্টন, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন, কাকরাইল, নাইটেংগেল মোড়সহ আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ওই সড়গুরো দিয়ে চলাচলকারীদের প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা কঠিন ভোগান্তি পোহাতে হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সে দিনই কারাগারে পাঠানো হয়। ওই বছরের অক্টোবরের শেষে হাই কোর্টের রায়ে সাজা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। তার আগের দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়ও বিএনপির চেয়ারপারসনের ৭ বছর সাজা হয়। খালেদা জিয়া শারিরীক অসুস্থজনিত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মানবিক কারণে মার্চ মাসেই সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদার জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে তাকে কারাগারের পরিবর্তে বাসায় থাকার সুযোগ করে দেয়। বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন খালেদা জিয়া আছেন।