একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মায়ের আকুতি শেষ পর্যন্ত ছেলের বিচার দেখে যেতে পারবো তো? দিন যায় রাত আসে, এক একটা দিন যেন হাজার বছরের সমান শুধু চেয়ে থাকি বিচারের পাল্লার দিকে কবে আমার সন্তান হত্যার বিচার পাবো?
বিচারের আশায় ৪টি বছর পার হয়ে গেছে। বুক ফাঁটা কান্নায় এমনটাই বলছিল ঝিনাইদহের শৈলকুপার হাবিবপুর গ্রামের গুম হওয়া যুবক রিয়াজুল ইসলাম লিপটনের পিতামাতা। ১ ভাই ৩ বোনের মধ্যে লিপটন সবার বড় এবং একমাত্র পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে মা-বাবা এখন পাগলপ্রায়। ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারী লিপটন নিখোজ হয়। ৪ বছরেও লিপটন গুম রহস্য উন্মোচন হয়নি।
লিপটনের পিতা আঃ খালেক জানান আমার ছেলের সাথে উপজেলার পৌর এলাকার কাজীপাড়া গ্রামের মৃত কাজী আশরাফুল ইসলামের মেয়ে শারমিন আক্তার তানিয়ার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।
আমার ছেলের ২টা ট্রাক ছিল আর তানিয়ার ভাটার ব্যবসা থাকায় সেই সুবাধে তাদের মধ্যে পরিচয়। আমার ছেলের নামে ছিল ট্রাক এর মালিকানা আর নমিনি হয়েছিল শারমিন আক্তার তানিয়া।
নিখোজ হওয়ার দিন তার বন্ধু বাবু মোটর সাইকেলযোগে ভাটায় নামিয়ে দিয়ে আসে । এরপর আমার ছেলে সেখান থেকে আর ফিরে আসেনি। আমি খোজ নিয়ে যতটা জেনেছি আমার ছেলেকে ভাটায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
লিপটনের বন্ধু উপজেলার কবিরপুর গ্রামের বাবু শেখ জানান, লিপটন আমার বাল্যকালের বন্ধু, আমি তার কথামত মোটর সাইকেলযোগে আনুমানিক রাত ৮টার দিকে ভাটায় নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে আসে।
এরপর লিপটন তাকে বলেছিল কোথায় আছি কাউকে না জানাতে। অনেক খোজাখুজির পর তাকে পাওয়া না গেলে তার বাবা আমার কাছে লিপটন সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি ভাটায় নামিয়ে দেওয়ার কখা বলি।
আমি যখন লিপটনকে নিয়ে যাচিছলাম তখন কয়েকবার তানিয়ার সাথে লিপটনের কথা হয় এবং লিপটনকে ভাটায় একা একা যেতে বলে তানিয়া।
আঃ খালেক আরো জানান, আমার ছেলে নিখোজ হওয়ার পর প্রথমে আমি শৈলকুপা থানায় জিডি করি।পরে খোজ নিয়ে বুঝতে পারলাম আমার ছেলে আর এই দুনিয়ায় নেই তখন আমি ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করি।
এরপর আদালতের নির্দেশে পিবি আই মামলাটি তদন্ত করে। পিবি আই তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার পর আদালত জে আর মামলা হিসাবে নিতে শৈলকুপা থানাকে নির্দেশ দেয়্ সেই মোতাবেক শারমিন আক্তার তানিয়াকে প্রধান আসামী করে ৯ জনের বিরুদ্ধে শৈলকুপা থানায় মামলা রুজু হয়।
এরপর জামিন নিতে গেলে তানিয়াকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয় ও ৩দিনের রিমান্ড এ আনা হয়। ২৫ দিন জেল খাটার পর সে জামিনে মুক্তি পায়। বর্তমান মামলাটি হাই কোর্টে দীর্ঘদিন স্থগিত আদেশে রয়েছে। কয়েকবার আমার আইনজীবি শুনানী করেছে। একের পর এক আসামী সময় নিয়ে কালক্ষেপন করায় কোন সুরাহা হয়নি।
আঃ খালেক চান আমার ছেলে যদি জিবীত থাকে তাহলে ফেরত চাই আর যদি আমার ছেলেকে হত্যা করা হয় তাহলে তার বিচার চাই।তিনি মহামান্য হাইকোর্টের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে অতিদ্রুত এর সুরাহা চান।
এবিষয়ে শারমিন আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি মামলাটি উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়ে আছে বলে জানান।
শৈলকুপা থানা ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, শুনেছি মামলাটি উচ্চ আদালতে স্থগিত আদেশে আছে এর বেশী কিছু আমি জানি না।