মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে দাঁপিয়ে বেড়ানো বিরল প্রজাতির কালো মুখো হনুমান এখন খাচ্ছে সরকারী খাবার।
খাবার পেয়ে কলোমুখো হনুমানগুলোও খুশির জোয়ারে লাফিয়ে লাফিয়ে জানাচ্ছে অভিনন্দন।
মেহেরপুর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাফর উল্ল্যাহ বলেছেন, মেহেরপুর জেলায় তালিকাভুক্ত ২৭০ টি কালো মুখো হনুমান রয়েছে। বন অধিদপ্তরের তত্বাবধানে এসব হনুমানকে প্রতিদিনি ১০০ গ্রাম কলা, ১০০ গ্রাম পাউরুটি, ১০০ গ্রাম বিস্কিট, ২৫/৩০ গ্রাম চিনা বাদাম খাওয়ানো হচ্ছে।
তিনি জানান, বন অধিদপ্তরের আওতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর মেহেরপুর জেলায় ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৩০ দিনের জন্য এ বাজেট দিয়েছে বন অধিদপ্তর। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বন অধিদপ্তরের কাছে ডিও লেটার পাঠানোর কারণে এ বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানান বন কর্মকর্তা জাফর উল্ল্যাহ।
বন বিভাগের কর্মচারী নজরুল ইসলাম ও আনসার আলী মুজিবনগরের বিভিন্ন স্থানে এবং জিল্লুর রহমান সদর উপজেলার নির্দিষ্ট স্থানে এসব হনুমানের জন্য খাদ্য প্রদান করে থাকেন।ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার মেসার্স আব্দুল মান্নান।
মেহেরপুর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাফর উল্ল্যাহ আরো বলেছেন, কালো মুখো হনুমান ও পশুপাখির খাদ্য উপযোগী বিভিন্ন ফলজ সাড়ে ৪ হাজার বৃহ্মরোপন করা হয়েছে। জেলার যেসব এলাকাগুলোতে হনুমানসহ অন্যান্য পাখির অভয়ারণ্য রয়েছে সেসব এলাকায় ২০০০ বাবলা গাছ, ২০০ শতাধিক পেয়ারা গাছ, ১০০০ জাম গাছ রোপন করা হয়েছে।
সদর উপজেলার সীমান্তবর্তি বুড়িপোতা ইউনিয়নের কালাচাঁদপুর গ্রামের মরগাঙ খালের উত্তরপাড়ে, মুজিবনগর উপজেলার স্বরসতি খালের পাড়ে, মেহেরপুর সদর উপজেলার সৈয়দ উদ্দীন ডিগ্রি কলেজ থেকে পৌর সীমানা পর্যন্ত, আমঝুপি ইউনিয়নের খোকসা হতে আযান গ্রাম পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশ, গাংনী উপজেলার করমদী গ্রামের জুবাতলা মাঠ সড়কের উভয় পাশে, ভাটপাড়া নীলকুঠী ইকোপার্ক প্রাঙ্গণে এসব বৃক্ষরোপন করা হয়।
বৃক্ষরোপনের ফলে পশুপাখির খাদ্য উৎপাদন, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব হতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।
ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলাতে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মৃদ্ধা মো: মুজাহিদুল ইসলাম, সদস্য সচিব জাফর উল্ল্যাহ, কমিটিতে মোট ৯ জন সদস্য রয়েছেন।
জানা গেছে, বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমানের আদি নিবাস ভারতে। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে কাটাতারের বেড়া পার হয়ে ১০/১৫ বছর আগে থেকে মেহেরপুরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মুজিবনগর উপজেলার অন্ত:ত ৫ টি স্পট, মেহেরপুর শহর ও সীশান্তবর্তি গ্রামগুলোতে হনুমানগুলো খাদ্যের অভাবে সারাদিন ছুটোছুটি করে বেড়ায়।
খাদ্যের অভাবে এসব হনুমান কৃষকদের ফসলের মাঠ, ফলের বাগান এবং বাসা বাড়িতে পর্যন্ত হানা দেয়।বিশেষ করে করোণাকালে বিরাট খাদ্য সংকটে পড়ে এই হনুমান।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেছেন, আমাদের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কালোমুখো হনুমানের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পেরে ভালই লাগে। খাবার পাওয়ার পর হনুমানগুলো লাফালাফি করে যেনো অভিনন্দন জানায়।