ইসলামি আইনশাস্ত্রবিদদের ফকিহ বলা হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মতো বিভিন্ন ফকিহ-মনীষীও শবেবরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে মূল্যবান মন্তব্য করেছেন।
ফিকহে হানাফির চোখে: আল্লামা শামি, ইবনে নুজাইম, আল্লামা শরমবুলালি, শায়খ আবদুল হক দেহলবি, মাওলানা আশরাফ আলী থানবি, মাওলানা আবদুল হক লখনবি, মুফতি মুহাম্মদ শফিসহ উলামায়ে হানাফিয়ার অভিমত হলো, শবে বরাতে শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী রাত জেগে একাকী ইবাদত করা মুস্তাহাব।
তবে এর জন্য জামাতবদ্ধ হওয়া যাবে না। (আদ-দুররুল মুখতার : ২য় খণ্ড, ২৪-২৫ পৃষ্ঠা/ আল বাহরুর রায়েক : ২য় খণ্ড, ৫২ পৃষ্ঠা/ মারাকিল ফালাহ : ২১৯ পৃষ্ঠা)।
ফিকহে শাফেয়ির চোখে: ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে, শাবানের ১৫তম রাতে অধিক পরিমাণ দোয়া কবুল হয়ে থাকে। (কিতাবুল উম্ম : ১ম খণ্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা)।
ফিকহে হাম্বলির চোখে: ইমাম ইবনে মুফলি হাম্বলি (রহ.), আল্লামা মনসুর আল বাহুতি, ইবনে রজর হাম্বলি প্রমুখ হাম্বলি উলামায়ে কেরামের মতে, শবে বরাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। (আল মাবদা : ২য় খণ্ড, ২৭ পৃষ্ঠা/ কাশফুল কিনা : ১ম খণ্ড, ৪৪৫ পৃষ্ঠা)।
ফিকহে মালেকির চোখে: ইবনে হাজ মালেকি (রহ.) বলেন, সালফে সালেহিনরা এ রাতকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং এর জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। (আল মাদখাল : ১ম খণ্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা)।
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার চোখে: আবদুল আব্বাস আহমাদ ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ১৫ শাবানের রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক মারফু হাদিস এবং আসারে সাহাবা বর্ণিত রয়েছে। এগুলো দ্বারা এ রাতের ফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়।
সালফে সালেহিনের কেউ কেউ এ রাতে নফল নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হতেন। আর শাবানের রোজার ব্যাপারে তো সহিহ হাদিসগুলোই রয়েছে। (ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম : ২য় খণ্ড, ৬৩১ পৃষ্ঠা)।
মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.)-এর চোখে: হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, হাদিসে শবে বরাতের তিনটি কাজ সুন্নাত অনুযায়ী করাকে সওয়াব ও বরকত লাভের উপায় বলা হয়েছে।
প্রথমত, ১৫ তারিখ রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা। সঙ্গে সঙ্গে গরিব-মিসকিনদের কিছু দান করে সে দানের সওয়াবটুকু ওই মৃতদের নামে বখশে দিলে আরও ভালো হয়। সেই মুহূর্তে হাতে না থাকলে, অন্য সময় গোপনে কিছু দান করে দেওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, রাত জেগে একা একা বা বিনা দাওয়াতে জড়ো হয়ে যাওয়া দু-চারজনের সঙ্গে ইবাদতে মশগুল থাকা। তৃতীয়ত, শাবানের ১৫ তারিখ নফল রোজা রাখা।
মুফতি তাকি উসমানির চোখে: শায়খুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানি (দা.বা.) বলেন, ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নফল ইবাদত এমনভাবে করবে, সেখানে কেবল তুমি আছ, আর আছেন আল্লাহ। তৃতীয় কেউ নেই। সুতরাং যে কোনো নফল ইবাদতের ক্ষেত্রেই শরিয়তের অন্যতম মূলনীতি হলো, এতে জামাত করা মাকরুহে তাহরিমি ও নিষিদ্ধ। (ইসলাহি খুতুবাত : ৪র্থ খণ্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)।
ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানির চোখে: আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানি (রহ.) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আস-সিলসিলাতুস সহিহাহ আল মুজাল্লাদাতুল কামিলাহ’ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডের ১১৪৪নং অধ্যায়ের ২১৮ নম্বর পৃষ্ঠায় শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস এনে যে মত ব্যক্ত করেছেন তা হলো- হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, অর্ধ শাবানের রাতে (শবে বরাতে) আল্লাহতায়ালা তাঁর সব মাখলুকের প্রতি মনোযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
(সহিহ ইবনে হিব্বান : হাদিস ৫৬৬৫, আল-মুজামুল আওসাত : হাদিস ৬৭৭৬, আল-মুজামুল কাবির : হাদিস ২১৫, সুনানে ইবনে মাজা : হাদিস ১৩৯০)।