বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তামিমের আগে ট্রিপল সেঞ্চুরি পেয়েছেন রকিবুল হাসান। ‘থ্রি হান্ড্রেড’ ক্লাবে নাম লেখাতে পারতেন দেশের আরও চার ক্রিকেটার
‘শক্তি শারীরিক সামর্থ্য থেকে নয় অদম্য ইচ্ছাশক্তি থেকে আসে’—মহাত্মা গান্ধী। অ্যাডিলেডে গত নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ডেভিড ওয়ার্নার ‘ট্রিপল’ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর তাঁকে গান্ধীর এ উক্তি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ক্যানডিস ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারের জীবনসঙ্গী সঙ্গে এ কথাও যোগ করেন, ‘লোকে তোমাকে কী ভাবে সেটি গুরুত্বপূর্ণ না। নিজের ব্যাপারে তুমি কী ভাবো তা গুরুত্বপূর্ণ।’
ধান ভানতে শিবের গীত? মোটেও না। ময়দান যাই হোক, ট্রিপল সেঞ্চুরি করা চাট্টিখানি কথা না। কী টেস্ট, কী ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। শারীরিক সামর্থ্যের সঙ্গে থাকতে হয় অদম্য ইচ্ছাশক্তি। আজ তামিম বিসিএলে ট্রিপল তুলে নেওয়ার পর ক্যানডিসের কথাগুলো কী অদ্ভুতভাবে মিলে যায়! বড় ইনিংস খেলার অদম্য ইচ্ছাশক্তি থেকেই ৩০০ রানের দেখা পেলেন তামিম। মধ্যাঞ্চলের বোলাররা বিশেষ করে পেসাররা কাল একটু শর্ট লেংথ ও বাইরে বল করেছেন। তামিম এ সুযোগগুলো যেমন নিয়েছেন তেমনি ছিল না অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো। একদম স্বাভাবিক ব্যাটিং যাকে বলে।
সংক্ষিপ্ত সংস্করণে তামিমের স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। পূর্বাঞ্চলের হয়ে তামিমের রেকর্ড গড়া এ ইনিংসে রয়েছে স্ট্রাইকরেট নিয়ে তিনি নিজে কী বিশ্বাস করেন তার প্রতিচ্ছবি। ৪২৬ বলে অপরাজিত ৩৩৪ রানের মধ্যে ৩ ছক্কা ও ৪২টি চার। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটি এখন তামিমের। বাংলাদেশের মাটিতে এটি সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও। রকিবুল হাসানের ৩১৩* ছাপিয়ে যাওয়া তামিমের ইনিংসে স্ট্রাইকরেট আশির কাছাকাছি (৭৮.৪০)। প্রায় পাঁচ সেশন ধরে ওয়ানডে মেজাজের এ স্ট্রাইকরেট ধরে রেখে ‘ত্রিশতক’ তুলে নেওয়া নিশ্চয়ই সামর্থ্যের পরিচায়ক।
মধ্যাঞ্চলের হয়ে মাঠে ছিলেন রকিবুল হাসান। রেকর্ড হাতছাড়া হওয়ার পর অভিনন্দন জানিয়েছেন তামিমকে। বাংলাদেশের হয়ে এর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি ছিল শুধু রকিবুলেরই। ২০০৭ সালের ২১ মার্চ বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে সিলেটের হয়ে অপরাজিত ৩১৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন জাতীয় দলে ‘সাবেক’ বনে যাওয়া এ ক্রিকেটার। এত দিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণিতে এটাই ছিল লম্বা ইনিংস খেলার রেফারেন্স পয়েন্ট। আজ থেকে তা দুইয়ে নেমে সর্বোচ্চ হয়ে থাকবে—তামিম ৩৩৪*। স্কোরটা কী একটু পরিচিত লাগছে?
তামিমের ইনিংসটি ঘরোয়া হলেও রোমান্টিক ক্রিকেটপ্রেমীরা মিলিয়ে নিতে পারেন। টেস্ট আন্তর্জাতিক হলেও সেটিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই! ১৯৩০ সালে হেডিংলিতে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি (৩৩৪) তুলে নেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। ৫৮ বছর পর পেশোয়ার টেস্টে ব্র্যাডম্যানের সেই ইনিংসকে সম্মান জানিয়ে ৩৩৪ রানে অপরাজিত থেকে যান মার্ক টেলর।বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এ সংখ্যাটা আজ থেকে ‘ঘরোয়া’ হয়ে গেল, তামিমের কল্যাণে!
নাসির হোসেনের নিশ্চয়ই এখন আক্ষেপ হচ্ছে? ইস, যদি আরেকটু থাকতে পারতাম! জাতীয় দলের বাইরে থাকা এ ব্যাটসম্যানের ট্রিপল সেঞ্চুরি পাওয়ার কথা তামিমেরও আগে। ২০১৭ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগে শেষ রাউন্ডের শেষ দিনে রংপুর বিভাগের হয়ে ২৯৫ রান করে আউট হয়েছিলেন নাসির। কিংবা মার্শাল আইয়ুব? ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় মাপের ব্যাটসম্যান পরিচিতি পাওয়া মার্শাল ট্রিপলের দেখা পেতে পারতেন নাসিরেরও আগে। ২০১২-১৩ মৌসুমে ইসলামি ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের হয়ে ২৮৯ করে আউট হন মার্শাল। এভাবে মোসাদ্দেক হোসেনের আছে ২৮২, শামসুর রহমানের ২৬৭। কিন্তু ওই দুজন ছাড়া আর কেউ ‘থ্রি হান্ড্রেড ক্লাব’-এ নাম লেখাতে পারেননি।
সুত্র-প্রথম আলো